blood pressure low অথবা নিম্ন রক্তচাপ বা Hypotension অথবা লো প্রেসার কী। আসলে নরমাল blood pressure বলতে সাধারনত বুঝায় যে যদি কারও প্রেসার পরিমাপের পরে 120/80 মিলিমিটার মার্কারি থাকে তখন সেটা নরমাল blood pressure হিসাবে ধরা হয়। তবে ব্লাড প্রেসার মাপার পরে কারও প্রেসার যদি 130/80 এর বেশি হয়ে যায় তখন আমরা তার হাই ব্লাড প্রেসার আছে বলি এবং 140/90 এর উপরে ব্লাড প্রেশার চলে গেলে তখন হাই ব্লাড প্রেসার এর জন্য উন্নত চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু blood pressure low থাকা নিয়েও অনেককেই বেশ চিন্তিত থাকতে ও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে দেখা যায়।
আসলে এই Hypotension বা blood pressure low বলতে কি বুঝায়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে low blood pressure হলো যখন কারো ব্লাড প্রেসার যদি 90/70 এর নিচে চলে যায় তখন তাকে আমরা বলি low blood pressure। সাধারনত এমনিতেই অনেকের ব্লাড প্রেসার একটু লোয়ার সাইডেই থাকতে দেখা যায় । যেমন- কারও কারও প্রেসার সর্বদা 100/70 অথবা 100/80 এরকম থাকে । অনেক সময় দেখা যায়, ছোট সময় থেকেই তার ব্লাড প্রেসার এরকম কম ছিল এবং বড় হয়েও তার ব্লাড প্রেসার এরকম 100/80 অথবা 90/70 এরকম কমই থাকে এবং এই কম প্রেসার নিয়েও তিনি নিয়মিত স্বাভাবিক চলাফেরা কাজকর্ম সবই করছেন। এতে তার কোনো অসুবিধাই হচ্ছেনা। তাহলে এটা তার জন্য blood pressure low বলা যায় না। বরং এটাই তার জন্য স্বাভাবিক ব্লাড প্রেসার বলা যায়।
নিম্ন রক্তচাপ বা হাইপোটেনশন এর উপসর্গগুলো কি হতে পারে?
কারো যদি স্বাভাবিক ব্লাড প্রেসার সর্বদা 120/80 থাকে এবং কোন কারনে যদি তার সেই স্বাভাবিক ব্লাড প্রেসার কখনো 90/70 এর নিচে চলে যায় তখন আমরা তাকে blood pressure low বলতে পারি। শুধু তাই নয়। দেখা গেল কারও ব্লাড প্রেসার কমে গেছে এবং তার কারণে যদি তার কোন symptoms হয় অর্থাৎ কোন উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন- মাথা ঝিম ঝিম করা, মাথা হালকা লাগা, মাথা ঘোরাতে থাকা অথবা মাথা ঘুরিয়ে পরে যাওয়া, শরীর খুব ক্লান্ত ও দুর্বল লাগতে পারা অথবা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘুরায় ও অনেকে মাথা ঘুরে পড়েও যায়, পানিশূন্যতা অথবা দীর্ঘক্ষণ পানি না খেয়ে থাকলে বা ডিহাইড্রেসানের কারনে, চোখে ঘোলা বা অন্ধকার দেখা যেতে পারা তখন আমরা তার লো প্রেসার হয়েছে ধরে নিতে পারি। এছাড়া নিয়মিত ভারসাম্যহীন খাদ্য গ্রহণের কারনেও রক্তচাপ নিচের দিকে যেতে পারে। আর এগুলোই হল মূলত blood pressure low symptoms বা উপসর্গ।
নিম্ন রক্তচাপ বা হাইপোটেনশন কেন হয়ঃ
সবার আগে হাইপোটেনশন বা ব্লাড প্রেসার লো কেন হয় সেটা জানা আমাদের জন্য খুবই জরুরী। তবে লো ব্লাড প্রেসার কিন্তু স্থায়ী কোন অসুখ নয়। হঠাৎ করেই যে কারও শরীরে লো ব্লাড প্রেসার বা হাইপোটেনশন দেখা দিতে পারে। তবে এর সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ থাকতে হবে। সুনির্দিষ্ট কারনের মধ্যে যদি কারো হঠাৎ করে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয় অর্থাৎ ডায়রিয়া হলো। অথবা অনেক বেশি বমি হল অথবা কোন কারনে বা কেটে গিয়ে অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হল, যেমন- মেয়েদের পিরিয়ডের সময় বেশী রক্তক্ষরণ হলে তখন প্রেসার কমে যেতে পারে।
অথবা কারো যদি হঠাৎ করে হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। হার্ট অ্যাটাক এবং হার্টের কার্যক্ষমতা অনেক কমে যায় বা হার্ট ফেইলর হয় তখন কিন্তু ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে। অথবা অনেকে আছেন হাই প্রেসারের রুগী। তাই, হাই প্রেসারের জন্য দীর্ঘদিন অনেকগুলো ঔষধ খাচ্ছেন। তাঁদের যদি ঔষধের ডোজ অনেক বেশী হয় তখন তার লো প্রেসারের আশঙ্কা হতে পারে। আবার কিছু হরমোন আছে। সেই হরমোনের ঘাটতির কারণে ব্লাড প্রেসার লো হয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়গুলো কি কি?
কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে কিছু মানুষের ব্লাড প্রেসার এমনিতেই কমের দিকে থাকে। যেমন- 100/70 অথবা 90/70। তবে তার ব্লাড প্রেসার যদি সব সময় এরকম এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে এবং এই ব্লাড প্রেসারে তাদের স্বাভাবিক কোনো অসুবিধা হয় না। তারা এই প্রেসার নিয়ে সবসময় চলাফেরা করেন এবং ভাল আছেন।
তাহলে চিকিৎসকের মতে এটা কিন্তু তাদের জন্য লো প্রেসার নয় এবং এতে শঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই। এমনকি কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা করারও প্রয়োজন নেই এবং কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন নেই। ধরেই নিতে পারেন যে, তার স্বাভাবিক ব্লাড প্রেসার হল 100/70 অথবা 90/70। আর এটাই তার জন্য স্বাভাবিক প্রেসার।
তবে এই ধরনের যাদের প্রেসার যেমন- 100/70 বা 90/70। তাদের যদি কখনও ব্লাড প্রেসার কমে 60/4০ হয়ে যায় তখন কিন্তু তাদের জন্য সেটা আবার লো প্রেসার। যাদের প্রেসার 90/70 সব সময় থাকে বা 100/70 সব সময় থাকে। তাদের কিন্তু এটাকে লো প্রেসার হিসেবে আখ্যায়িত করা ঠিক হবে না এবং এটার জন্য শঙ্কিত হওয়ার কোন দরকার নেই।
আরও পড়ুনঃ উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায়।
আবার একটা গ্রুপের বা বয়সের কিছু রুগী আছেন যাদের কোন হরমোনের সমস্যা নেই, হার্টের সমস্যা নেই, তবে বয়স কম, তাঁদের শারীরিক উচ্চতা কম, উজন কম, খুব চিকন ও পাতলা, বিশেষ করে কম বয়সি ও অবিবাহিত স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে পড়ুয়া মেয়েরা। যারা ছোট সময় হতেই হালকা পাতলা গড়নের ছিল এবং বড় হয়ে এখনও সেরকমই রয়েছে, ওজন স্বাভাবিক যা থাকার কথা তার থেকেও ওজন কম। ছোট সময় থেকেই তাদের ব্লাড প্রেসার 100/70 অথবা 90/70 থাকে। সাধারনত এই ধরনের রোগীদের লো প্রেসার এর জন্য কোন চিকিৎসা প্রয়োজন নেই বললেই চলে।
এই যে গ্রুপটা এদের blood pressure low থাকার অভিযোগ থাকে অনেক বেশী। এদের প্রেসার সাধারনত ১০০/৮০, ১০০/৭০, ৯৫/৭০, ৯৫/৬৫, ইত্যাদি হয়ে থাকে। এরা সাধারণত বেশিরভাগ কমপ্লেইন করে যে আমাদের লো প্রেসার আসলে এটা তার জন্য মোটেই লো প্রেসার নয় তার যে হাইট, তার যে বডি ওয়েট একটু কম, তার খাবারের যা ধরন তাতে আসলে তার জন্য এটাই স্বাভাবিক প্রেসার। ব্লাড প্রেসার 90/70 বা 100/70 তার জন্য স্বাভাবিক প্রেসার।
সাধারনত এদের যেসব অসুবিধাগুলো হয় তার মধ্যে বেশী দেখা যায় তাদের মাথা ঘুরায়, বুক ধরফর করে। এদের ক্ষেত্রে দেখতে হবে যে তাদের প্রেসারটি low হচ্ছে এই সমস্ত উপসর্গগুলোর কারনে হচ্ছে কিনা। তবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, এদের প্রেসার সবসময় এরকমেরই কম থাকে। যখন তারা সুস্থ থাকেন তখনও এরকম থাকে আবার যখন অসুস্থ থাকেন তখনও এরকম থাকে। কিন্তু তারা যখন অসুস্থ বোধ করেন তখনই কেবলমাত্র প্রেসার মাপেন। আর তখনই দেখেন যে তাদের ব্লাড প্রেসার কম দেখাচ্ছে।
ব্লাড প্রেসার যদি কারো স্বাভাবিকভাবে সব সময় 130/80 থাকে বা 120/80 থাকে। তাদের ব্লাড প্রেসার যদি হঠাৎ করে 90/70 নিচে চলে যায়, তখন তাকে blood pressure low হওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসা নিতে হবে। হঠাৎ করে তার শরীরে দুর্বলতা লাগতে পারে তবে সেই দুর্বলতার কারণ হয়তো অন্য কোন কারনে। হয়তো তার অপুষ্টি দেখানো আছে অথবা কোনো ইনফেকশন আছে অথবা ঘুমের সমস্যা হচ্ছে অথবা অ্যাংজাইটি টেনশন এ আছেন। দুর্বলতার অন্য যে কোনো কারণ রয়েছে। কিন্তু এই যে 100/70 যে প্রেসার সব সময় তার এইটা থাকে এইটার জন্য কিন্তু তার এই দুর্বলতাটা হচ্ছে না তো?
কিন্তু যাদের ব্লাড প্রেসার 120/80 থাকে বা 190 বা 140/90 থাকে অথবা 130/80 থাকে সব সময় যাদের এইরকম ব্লাড প্রেসার থাকে তাদের যদি হঠাৎ করে ডায়রিয়া হয়ে বা বমি হয়ে বা অন্য কোনো কারণে ব্লাড প্রেসার অনেক কমে যায় এবং সেই প্রেসার অনেক কমে যাওয়ার কারণে তাদের যদি উপসর্গ দেখা দেয় যেমন- মাথা ঘোরাতে পারে, মাথা ঝিমঝিম করতে পারে, খুব দুর্বল লাগে অথবা যাদের হঠাৎ করে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা বা বমি হয়ে যদি প্রেসার কমে যায়।
তখন কিন্তু তাদের সেই ব্লাড প্রেসার এর জন্য চিকিৎসা করতে হবে। সেই চিকিৎসা কি? চিকিৎসা হলো প্রথমেই খুঁজে দেখতে হবে তিনি কোন প্রেসারের ঔষধ খাচ্ছেন কিনা। প্রেশারের জন্য যদি কোন ঔষধ খায় এবং ঔষধ যদি ওভারডোজ হয় সেই ওষুধের কারণে কিন্তু প্রেসার লো হয়ে যেতে পারে সেক্ষেত্রে ঐঔষধ কমাতে হবে অথবা বন্ধ করতে হবে।
blood pressure low এর জন্য কীভাবে এই ঘাটতি পূরণ করবেন?
দেহে বিভিন্ন ঘাটতি ও অনিয়মের কারনে blood pressure low হয়ে যায়। এর থেকে বাঁচতে মানব দেহের এই ঘাটতি সমূহ আমদেরকে খুব দ্রুত পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ যেটা পরামর্শ দিয়ে থাকেন সেটা হল খাবারে পটাশিয়াম কমিয়ে সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেশী করে খেতে হবে। পানি খাওয়া বাড়িয়ে দিতে হবে ও রেস্টে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণে ওর স্যালাইন খেতে পারেন অথবা কুসুম গরম পানির ভিতর লবণ গুলিয়ে খেতে পারেন অথবা একটি ডিম সাথে লবণ মিশিয়ে খেতে পারেন, গরু বা খাসির মাংস, দুধ এগুলো বেশী বেশী খেতে পারেন তাতেও আপনার প্রেসার বাড়বে।
তারপর দেখেন যদি আপনার উপসর্গগুলো চলে গেছে অথবা প্রেসার বেড়ে স্বাভাবিক হয়ে বা ১০০/৭০ হয়ে গেছে তাহলে আপনি মনে করতে পারেন যে আপনি লো প্রেসার হতে স্বাভাবিক প্রেসারে চলে আসছেন।
পরিশেষেঃ
বেক্তি ভেদে এই ব্লাড প্রেসারের স্বাভাবিক মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে blood pressure low স্থায়ী কোন রোগ নয়। low blood pressure হল একটি সাময়িক রোগ। একটা সাময়িক কিছু সময়ের পরে বা কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন পরে আবার ঠিক হয়ে যায়। low blood pressure বাড়ানোর জন্য হাই প্রেসারের মত কোন ঔষধ নেই যে অনেকগুলো ঔষধ দীর্ঘদিন ধরে খেয়ে যেতে হবে এবং খেলে আপনার প্রেসার আর লো হবে না ভাল থাকবে। বরং আপনাকে খুঁজতে হবে আপনার এই অসুবধাগুলর জন্য অন্য কোন কারণ আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে তার চিকিৎসা করাতে হবে।
তবে যাদের ব্লাড প্রেসার যদি আগে ১৩০/৮০ ছিল এবং হঠাৎ করে ১০০ এর নিচে চলে আসলো বা ৭০ এর নিচে চলে গেছে। তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তাছাড়া আপনার ওজন কেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এজন্য ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। কারণ ব্যায়াম প্রেসারকে স্বাভাবিক থাকতে সহায়তা করে। সঠিক পথ হল একজন ভাল ফিজিসিয়ানের কাছে যাওয়া এবং ফিজিসিয়ানের পরে একজন ভাল ডায়েটিশিয়ানকে দেখিয়ে খাদ্য তালিকা বা স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা ঠিক করে নিয়ে চলতে পারলেই আপনি blood pressure low থেকে মুক্তি পেতে পারেন। নিয়মিত আপনার ব্লাড প্রেসার মাপুন ও প্রয়োজনে ডাইরিতে নোট করে রাখুন। আরও পড়ুনঃ মেশিনের সাহায্যে প্রেসার মাপার সঠিক নিয়ম।