Blood cancer symptoms গুলো দেখলে আপনি কীভাবে খুব সহজে বুঝতে পারবেন। Blood Cancer বা Leukemia এই নামটি শুনেই আমরা সবাই এক ধরনের আতঙ্কিত হয়ে যাই যে Blood Cancer নিশ্চয়ই অনেক ভয়ের ব্যাপার। একবার যদি কারও Blood Cancer হয়ে যায় তাহলে আমরা হয়তো আর বাঁচবো না। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন যে, বর্তমান সময়ে চিকিৎসা শাস্ত্র এতটাই উন্নত হয়েছে যে Blood Cancer এ আক্রান্ত রুগীকে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ করে তুলা সম্ভব। বর্তমান সময়ে এখন ব্লাড ক্যান্সার (Blood Cancer) একটি নিরাময়যোগ্য রোগ। blood cancer symptoms গুলো ধরা পড়া মাত্র অর্থাৎ সঠিক সময়ে ও সঠিক নিয়মে চিকিৎসা নিলে ব্লাড ক্যান্সারের পেশেন্ট সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যেতে পারে।
Blood Cancer বা Leukemia বলতে কি বুঝায়ঃ
আমাদের শরীরে অসংখ্য সেল বা কোষ আছে। এই সেগুলো দিয়েই আমাদের দেহ গঠিত হয়। তেমনি আমাদের শরীরে রক্তের মধ্যেও তিন প্রকারের রক্ত কণিকা থাকে। সেই রক্ত কণিকা তিনটি হল লোহিত রক্তকনিকা, শ্বেত রক্ত কণিকা এবং অণুচক্রিকা। হাড়ের অস্থিমজ্জার ভেতরে এই রক্ত কণিকা সমূহ স্বাভাবিক নিয়মে গঠিত হয়ে থাকে। তারপর বিভিন্ন ধাপে এই রক্তকণিকাগুলো পরিপক্ব বা পরিণত হয়ে পরে এটি রক্তে মিশে। কোনো কারণে অস্থিমজ্জার ভেতরে স্টেমসেলের mutation বা পরিবর্তন হলে রক্তকণিকা তৈরির সময় ব্লাস্ট সেলস বা অপরিপক্ব কোষ অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাহলে সেগুলো আর পরিপক্ব হতে পারে না।
তাহলে বুঝা গেল Blood Cancer হল যে, শরীরের রক্তের মধ্যকার রক্ত কণিকা স্বাভাবিকের তুলনায় যদি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ একজন সুস্থ সবল প্রত্যেকটি মানুষের দেহে নির্দিষ্ট একটি অনুপাতে প্রত্যেকটি রক্ত কণিকা থাকে। এখন এটিই যদি অস্বাভাবিক বা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যায় তাহলে আমরা তাকে Blood Cancer বা Leukemia বলে থাকি।
আরও পড়ুনঃ ঔষধ ছাড়া ঘরে বসে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়।
বিভিন্ন বয়সের পুরুষ এবং নারী উভয়ের ক্ষেত্রে এই প্রত্যেকটি রক্তকণিকার একটি লেবেল থাকে। এই রক্ত কনিকার একটি যদি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায় তাহলে অন্যগুলোর যেমন- শ্বেত কণিকা বা WBC (white blood cells) যদি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় তাহলে হিমোগ্লোবিন এবং প্লেটলেট লেবেল কমে যায়।
ব্লাড ক্যান্সারের কারণ হিসাবে আমরা মেইনলি বলতে পারি যেমন WBC (white blood cells) গ্রুপের leukemia. আর Leukemia এর কারণ Genetics বা বংশগত এবং পরিবেশগত উভয়ই হতে পারে। তবে যেসকল ব্যক্তির leukemia এর পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে তাদের ব্লাড ক্যান্সারের সম্ভাবনা বা ঝুঁকি বেশী থাকে।
Genetics বা জিনগত কারণ এবং বংশানুগত কারনে Blood Cancer বা ব্লাড ক্যানসার হওয়া বলতে কি বুঝায়ঃ
এখানে একটি বিষয় পরিস্কার করা দরকার যে, Genetics বা জিনগত আর বংশানুগত কারণ এই দুটি বিষয় কিন্তু এক নয়। মানব দেহের প্রত্যেকটি কোষের মধ্যেই জীন আছে আর সেই জিনের মধ্যে DNA (Deoxyribonucleic acid) এ আছে। সেই জিনের কিছু পরিবর্তনের জন্য ব্লাড ক্যানসার হতে পারে। অনেক ব্লাড ক্যানসার এর ক্ষেত্রেই কিন্তু এই জিনগত সমস্যাটাই হচ্ছে মূল কারণ। কারণ জিনগত পরিবর্তনের জন্যই আমাদের কোষগুলো অতিরিক্ত পরিমানে বেশী তৈরি হয় এবং সেটাই ব্লাড ক্যানসার ঘটায়। আর বংশগত মানে হল আমার বা আপনার পরিবারে কারও ব্লাড ক্যানসার আছে। সেই কারনে আমারও ব্লাড ক্যানসার হয়েছে।
তাই বলা যায় বেশীরভাগ ব্লাড ক্যানসারই কিন্তু জন্মগত বা বংশগত নয়। জিনের পরিবর্তনটি কিন্তু জন্মের পরে Particularly কোন একটি কোষের মধ্যে হয়েছে। সুতরাং এটা বুঝা গেল যে বেশীরভাগ ব্লাড ক্যানসার জিনগত কারনে হয় কিন্তু জন্মগত বা বংশগত কারনে নয়।
Blood Cancer বা Leukemia হলে শরীরে কি কি Symptoms বা উপসর্গ দেখা দেয়ঃ
Blood Cancer বা Leukemia (লিউকেমিয়া) এর প্রকৃত কারণ কিছুটা জানা গেলেও আসলে এর প্রকৃত কারণ অজানাই রয়ে গেছে। ব্লাড ক্যান্সারও অনেক ধরনের আছে। তবে বিভিন্ন ধরনের Blood Cancer বা Leukemia (লিউকেমিয়া) এর কারণ ভিন্নি ভিন্ন হতে পারে। যেমন- বংশগত এবং পরিবেশগত উভয় কারণই এর সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। কেও এই ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে শরীরে কি কি সাইন symptoms বা উপসর্গ দেখা যায় সেই সমস্ত বিষয়ই আজকের ব্লগে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কিছু জানতে হলে আশা করি ব্লগটির শেষ লাইন পর্যন্ত পড়বেন। কারণ এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যা আমরা অনেকেই এই blood cancer symptoms গুলো সম্পর্কে জানি না বা জানলেও ভুল জানি।
আরও পড়ুনঃ উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও কারণগুলো কি কি ?
blood cancer হলে মানুষের মধ্যে সবথেকে প্রথমে এবং খুব কমন একটি symptoms দেখা যায় সেটি হল physical weakness or a lack of energy । হঠাৎ করেই বেশ কিছুদিন ধরে আপনার যদি এমন হয় বা কারও কারও ক্ষেত্রে শারীরিক এই weakness দিনকে দিন ডেভেলপ করছে এবং তিনি সেই উইকনেসটাকে persist করছেন বা আপনার weakness থাকছে। সেটাও কিন্তু blood cancer symptoms গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি লক্ষণ হতে পারে।
আমরা পূর্বে আলোচনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, আমাদের ব্লাড তৈরি হয় হল হাড়ের ভেতরে যে মজ্জা আছে সেখান হতে বা ব্লাড এর মধ্যে কতগুলো ম্যাচিওর সেল থাকে। যখন Bone marrow এর মধ্যে এই অপরিণত অথবা ক্যান্সার সেলের সংখ্যা বেড়ে যায় তখন এই পরিণত কোষগুলো কমে যায়।
তার মানে হল, শরীরে লোহিত রক্তকণিকা কমে যাবে এবং সেক্ষেত্রে অ্যানিমিয়া ডেভলপ করতে পারে, রক্ত সল্পতা দেখা দিতে পারে এবং রক্ত সল্পতা জনিত যে সমস্যাগুলো যেমন- শারীরিক দুর্বলতা, মাথা ঝিমঝিম করা, ক্লান্তি বোধ করা সেগুলো হবে। দেহে অপরিনত white blood cell বা শ্বেত রক্ত কণিকা বেড়ে গিয়ে ম্যাচিউড যে শ্বেত রক্ত কনিকা আছে সেগুলো কমে যাবে।
আমরা জানি যে, খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই শ্বেত রক্ত কণিকার কাজ হচ্ছে দেহের কোন Infection কে প্রিভেন্ট করা। সুতরাং শ্বেত রক্ত কণিকা কমে যাওয়ার ফলে যার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে তার বারবার ইনফেকশন হবে। বিভিন্ন জায়গার ইনফেকশন হতে পারে। মূলত জ্বর হচ্ছে, অল্প অল্প জ্বর হচ্ছ, ঘুষঘুষে কমছেনা এমনকি অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েও কমছেনা এই সমস্যাগুলো সৃষ্টি হবে।
আরও পড়ুনঃ ব্লাড প্রেসার লো হবার কারণ ও এর প্রতীকার।
তৃতীয়ত হচ্ছে যে, প্লেটলেট কমে যাওয়ার ফলে ব্লিডিং হতে পারে বিভিন্ন জায়গা থেকে এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হল কোন রকম ইনজুরি ছাড়াই নিয়মিতভাবে ব্লিডিং হতে পারে। দাঁতের মাড়ি থেকে ব্লিডিং হচ্ছে, ঘুমিয়ে আছে, সকালবেলা উঠে দেখল দাঁতের মাড়িতে রক্ত জমে আছে। গায়ের মধ্যে আঘাত ছাড়াই কালশিটে দাগ পড়ে যাচ্ছে। তো এগুলো হচ্ছে সাধারণত ব্লাড ক্যান্সারের উপসর্গ যে দুর্বলতা বোধ করা, বার বার জ্বর আসা বা ইনফেকশন হওয়া, শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্লিডিং হওয়া।
এগুলো ছাড়াও আরও একটা সমস্যা হয় সেটা হচ্ছে গা হাত পা ব্যথা করা। কারন ব্লাড ক্যান্সার তৈরির উৎস হচ্ছে Bone marrow। তাই Bone marrow তে যখন ব্লাড ক্যান্সার হয় তখন Bone marrow এর আয়তন এমন পরিমাণে বাড়তে থাকে যে আমাদের সমস্ত হাড়ের মধ্যেই একটা পেইন হয়। প্রচণ্ড বেগে একটা যন্ত্রণা হয়। এই উপসর্গগুলো কিন্তু অন্যান্য কারণেও হতে পারে। যেমন- কারও এনিমিয়া হল, Iron deficiency anemia, কারও পিরিয়ড বেশি হচ্ছে তখন এনিমিয়া ডেভলপ করল অথবা জ্বর সর্দি-কাশি সবারই হয়। কোন কারনে দাঁতের ইনফেকশন থেকে ব্লিডিং হতে পারে।
তবে এগুলো যদি আলাদা আলাদা ভাবে হয় তাহলে এতটা চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু যদি এগুলোর কোন কম্বিনেশন হয়। যেমন- আমার অ্যানিমিয়া রয়েছে, দুর্বলতা রয়েছে এবং তার সঙ্গে দাঁত দিয়ে রক্ত পড়ছে। আমার বার বার জ্বর আসছে তার সঙ্গে সঙ্গে অ্যানিমিয়া তার সঙ্গে সঙ্গে ব্লিডিং হচ্ছে। এই কম্বিনেশন গুলো হলেই কিন্তু আপনাকে দেখতে হবে যে আপনার ব্লাড ক্যান্সার আছে কিনা। তখন একজন হেমাটোলজিস্ট এর কাছে গিয়ে তখন পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে যে ব্লাড ক্যান্সার আছে কি নেই।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে সন্তান মেধাবী হয়।
দ্বিতীয়ত হতে পারে আন এক্সপ্লেইনড ওয়েট লস অর্থাৎ ওয়েট লস এর কোনো কারণ ছাড়াই বা কোন specific factor ছাড়াই যদি হঠাৎ করে দেহের ওয়েট লস শুরু হয়ে যায়। সেটি একটি কিন্তু blood cancer এর একটি ফ্যাক্টর হতে পারে।
তৃতীয়ত হচ্ছে যে, কোন swelling or lumps. ব্লাড ক্যান্সারের একটি টাইপই হল কিন্তু lymphoma. Lymphoma হচ্ছে বিভিন্ন রকম যে সমস্ত lymph gland যেগুলো আমাদের শরীরের মধ্যে থাকে সেগুলির swelling হয়। এটি যেহেতু ব্লাড ক্যান্সারের একটি টাইপ। সেহেতু এটির ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম lymphoid আছে সেগুলি ধীরে ধীরে ফুলতে থাকে।
চতুর্থ যে সমস্যাটি হতে পারে সেটি হল শরীরে শ্বাসের সমস্যা। হঠাৎ করে দেখা গেল কারো ক্ষেত্রে শ্বাস কষ্টর সমস্যার শুরু হল এবং সেটা ধীরে ধীরে বাড়ছে বা নিয়মিত একই রকম থাকছে। সেটিও কিন্তু একটি blood cancer symptoms হতে পারে।
এরপর আরেকটি symptoms হলো Night sweats। অর্থাৎ রাতে শুয়ে থাকা অবস্থায় শরিরে প্রচন্ড পরিমাণে ঘাম হচ্ছে। এমনকি এই ঘামের কারনে পড়নের জামা কাপড় ও বিছানার চাদর পর্যন্ত ভিজে যাচ্ছে। সেটিও কিন্তু একটি blood cancer symptoms হতে পারে।
এছাড়া শরীরে জ্বর আসা। এই জ্বর আসা কিন্তু কমন একটি ফিচার ব্লাড ক্যান্সারের ক্ষেত্রে। বেশ কিছু ব্লাড ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কিন্তু রেগুলার মোটামুটি ফিভার আসতে পারে।
বিভিন্ন রেশ অর্থাৎ যে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হয়তো এরকম রেশ বের হচ্ছে অথবা ত্বকের স্কিন ফুলে যাচ্ছে অথবা গ্লান্ড ফুলে যাওয়া, যকৃত ও প্লিহা বড় হয়ে যেতে পারে। এরকম সমস্যা কিন্তু ব্লাড ক্যান্সারের ডেভলপ করতে পারে।
এছাড়া বিভিন্ন রকম বোন পেইন, জয়েন্ট পেইন এগুলিতে ব্যথা করলে ব্লাড ক্যান্সারের এটি একটি ফিচার হতে পারে। এছাড়া অ্যানিমিয়া বা বেলার। স্কিন ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, সাদা হয়ে যাওয়া। এটি কিন্তু ব্লাড ক্যান্সারের আরও একটি লক্ষণ হতে পারে।
এছাড়াও রক্তের প্লেটলেট কম হয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্লিডিং হতে পারে। যেমন নাক থেকে, মাড়ির গোড়া থেকে বিল্ডিং হতে পারে বা ইউরিন এর সাথে, ষ্টুলের সাথে কিন্তু ব্লাড আসতে পারে। ব্লাড ক্যান্সারের এইরকম রকম বিভিন্ন রকম ফিচারস আসতে পারে।
পরিশেষেঃ
আজকে আমরা আলোচনা করলাম blood cancer symptoms বা ব্লাড ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কি কি ফিচার হতে পারে বা সাইন সিম্পটমস থাকে। এই symptoms গুলো বলার উদ্দেশ্য এই নয় যে আপনি symptoms গুলো দেখেই ধরে নিলেন বা ভাবতে শুরু করলেন যে আপনার আসলেই ব্লাড ক্যান্সারের মত কোন সমস্যা হয়েছে কিনা। তবে এগুলোর মধ্যে একটি বা দুটি সিমটম নরমালি কিন্তু বিভিন্ন মানুষের দেহে থাকতেই পারে।
তবে এই গ্রুপের মানুষের মধ্যে যে সমস্ত সাইন symptoms আছে সেগুলি থাকলে যে ব্লাড ক্যান্সার একদমই সেরকম নয়। বিভিন্ন ধরনের ব্লাড ক্যান্সারের ক্ষেত্রেই এই ধরনের symptoms থাকতে পারে। এ ধরনের symptoms গুলোর মধ্যে একটি বা দুটি থাকলেই কিন্তু তার মানে এই নয় যে ধরে নিতে হবে তার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে।
কারণ এই সিমটমগুলি গুলি খুবই কমন এবং খুবই nonspecific। অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যাতেও কিন্তু এই ধরনের symptoms গুলো থাকতে পারে। তবে সেটা একমাত্র চিকিৎসক কর্তৃক পরীক্ষা নিরীক্ষার পরই বলা যাবে যে এই সমস্ত symptoms গুলো আসলে আপনার blood cancer symptoms কি না। তাই সন্দেহ হলেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন।