মুখের ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করার সহজ ১০ টি ঘরোয়া টিপস এখানে শেয়ার করা হল। ব্রণ হল এমন একটি সমস্যা, যা সুন্দরী সকল রমনীদের জন্য প্রধান একটি মারাত্মক অস্বস্তিকর একটি সমস্যা। এই ব্রণ স্বাভাবিক ভাবেই মুখের ও ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। কম বয়সী সকল নারী পুরুষ বিশেষ করে টিনএজ সহ উভয় বয়সী সকলেই এ সমস্যায় ভুগে থাকেন।
তবে সাধারনত তৈলাক্ত মুখ বা তৈলাক্ত ত্বকেই ব্রণ হতে দেখা যায় বেশি। আজকাল উঠতি বয়সী সকল তরুণ তরুণী, মাঝবয়সী নারীদেরও মুখে ব্রন হচ্ছে। আর কালো দাগ পড়ে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আবার ত্বক থেকে এই ব্রনের কালো দাগ সহজে মুছতেও চায়না। যা প্রত্যেকের কাছে সবচাইতে বেশী অস্বস্তিকর একটি বিষয়।
আর তখনই শুরু হয় নানারকম মানুসিক টেনশান। আর টেনশান থেকে শেষ পর্যন্ত সবার কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে ফেলা। যার কারনে একটা সময়ে গিয়ে ত্বকে ব্রনের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। এবং তার থেকে অসংখ্য ছোট বড় কালো দাগের সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে বেশি খারাপ তখনই লাগে, মুখের ব্রণ সেরে যাওয়ার পরেও যখন ব্রণের ক্ষত স্থানের দাগগুলো আমদের ত্বকে থেকে যায়।
তবে একটা বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, ব্রন হাত বা নখ দিয়ে খুঁটলে কিন্তু ত্বকে এমন দাগ বেশি দেখা দেয়। আর তখন এই ক্ষত দাগগুলোকে ত্বক হতে খুব সহজে দূর করা যায় না। তাই দীর্ঘদিন যাবত যারা মুখে ব্রণ ও কালো দাগ এর সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য আমি অনেক রিসার্চ করে নিয়ে আসলাম ঘরোয়া ভাবে ব্রণের দাগ দূর করার সহজ কিছু উপায়।
তবে চলুন জেনে নেই মুখের ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করার সহজ ১০ টি ঘরোয়া টিপস।
১। চিনি ও লেবুর রসঃ যাদের ত্বকে ব্রনের অনেক ক্ষত বা কালো দাগ রয়েছে। ব্রণের দাগ রোধ করতে তারা নিয়মিত চিনি ব্যবহার করতে পারেন। কারণ চিনিতে আছে প্রচুর পরিমানে গ্লাইকলিক এসিড ও AHA উপাদান। যা ত্বকের মৃত কোষকে দূর করে এবং নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। আর লেবুর রসে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন- সি যা ত্বক থেকে যে কোনো দাগ তুলতে সাহায্য করে।
ব্যাবহার প্রণালীঃ প্রথমে এক টেবিল চামুচ চিনি নিয়ে তাতে সামান্য অলিভ অয়েল ও লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। তারপর আপনার আক্রান্ত ত্বকে ভাল করে ম্যাসেজ করুন। এভাবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে পরিস্কার পানি দ্বারা মুখ ধুয়ে ফেলুন। আর ভাল ফলাফল পেতে সপ্তাহে ২/৩ বার ত্বকে চিনি ও লেবুর এই পেস্ট টি ব্যবহার করুন। কিন্তু ত্বক পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলার পর অবশ্যই আপনার পছন্দমত একটি ময়েশ্চার ক্রিম লাগাতে ভুলবেন না।
২। ভিটামিন-ই ক্যাপসুলঃ ত্বকের বা মুখের ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করতে সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী উপায় হল ভিটামিন- ই। এই ভিটামিন- ই ক্যাপসুল আকারে দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। ভিটামিন-ই ক্যাপসুল ব্রণের ক্ষত দাগ সারাতে খুব ভালো কাজ করে। তাই আপনার ত্বকের প্রতিদিনের ময়শ্চারাইযার হিসেবে ভিটামিন-ই ক্যাপসুল ত্বকে ব্যবহার করুন। এই ক্যাপসুল আপনার ত্বকের ক্ষত বা কালো দাগ দূর করার পাশাপাশি মুখের ব্রণও দূর করে দিবে।
৩। আলুর রসঃ প্রাকৃতিক বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি গুন সম্পন্ন ও প্রাকৃতিক ভাবে মিনারেলে পরিপূর্ণ সবজি হল এই আলু। আলু আমাদের শরীর ও ত্বক উভয়ের জন্য খুবই উপকারী একটি সবজি। তাই আপনার মুখ থেকে ব্রণের দাগ দূর করতে আলুর জুস বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
ব্যাবহার প্রণালীঃ প্রথমে একটি আলু নিয়ে তা কেটে ছোট ছোট স্লাইস করে নিন। তারপর সরাসরি ত্বকের ক্ষত বা কালো দাগ এর ওপর লাগিয়ে রাখুন। এছাড়া আলু ভালকরে ধুয়ে কেটে ব্লেন্ড করে তা থেকে রসটুকু নিয়ে আপনার ত্বকে ম্যাসেজ করুন। ভাল ফলাফল পেতে আলুর রস ত্বকে লাগিয়ে পনেরো মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে পরিস্কার করে মুখ ধুয়ে নিন।
আপনি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে মাত্র একবার এইভাবে ত্বকে আলুর রস ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে ধীরে ধীরে আপনার মুখ থেকে ব্রনের সমস্ত কালো দাগ চলে যাবে।
৪। টকদই ও হলুদ গুঁড়াঃ টক দই ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে মুখ বা ত্বক থেকে ব্রণের কালো দাগ খুব সহজেই দূর করা যায়। বিউটি এক্সপার্টদের মতে এটি খুবই কার্যকর একটি পদ্ধতি।
ব্যাবহার প্রণালীঃ মুখের ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করার এই মিশ্রণটি তৈরি করার জন্য একটি পাত্রে প্রথমে ৩/৪ চামুচ টক দই নিয়ে নিন। তারপর এর সাথে দেড় চামুচ হলুদ গুঁড়া নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি মিশ্রন তৈরি করুন। এবার এই মিশ্রনটি ভালকরে মুখে ম্যাসাজ করে দশ মিনিট লাগিয়ে অপেক্ষা করুন। তারপর পরিস্কার পানি দিয়ে ভাল করে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
ঘরে বসে সময় করে নিয়মিত এই প্যাকটি ব্যবহার করলে আপনার মুখের ব্রণের সমস্ত দাগ মিশে দূর হয়ে যাবে। আর আপনার ত্বক আরও উজ্জ্বল ও সুন্দর হবে।
৫। দারচিনি ও মধুঃ ত্বক থেকে ব্রনের কালো দাগ দূর করতে মধু একটি অতি কার্যকরী উপাদান। এই মধুর সাথে দারচিনি গুঁড়া মিশিয়ে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর এক ঘন্টা আগে আপনার মুখ ভালো করে ধুয়ে শুধুমাত্র দাগের উপর লাগিয়ে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। তারপর পরিস্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
যদি কোন প্রবলেম না হয় তাহলে সারারাতও লাগিয়ে রাখতে পারেন। আবার শুধুমাত্র মধু দিয়েও এপ্লাই করতে পারেন। সময় করে এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই আপনার মুখের ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর হয়ে ত্বক কত সুন্দর হয়ে গেছে।
৬। এসপিরিন ও মধুঃ এসপিরিন এ রয়েছে স্যালিসাইলিক এসিড। যা আপনার মুখের ব্রণের সমস্ত দাগ দূর করার জন্য খুবই কার্যকরী। এর সাথে সামান্য মধুর মিশ্রণে তৈরি হবে ব্রণের দাগ দূর করার চমৎকার একটি টনিক।
ব্যাবহার প্রণালীঃ প্রথমে দুইটি এসপিরিন ট্যাবলেট এর সাথে দুই চামুচ মধু যোগ করুন। তারপর এর সাথে আধা চামুচ পানি নিয়ে সবগুলি উপাদান একত্রে ভালকরে মিশিয়ে একটি মিশ্রন তৈরি করুন। তারপর খুব সাবধানে এটি আপনার মুখে লাগান। তবে খেয়াল রাখতে হবে মিশ্রণটি যেন চোখে না যায়। তারপর মিশ্রণটি কিছুক্ষন লাগিয়ে রেখে পরিস্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত কিছুদিন ব্যবহার করলেই দেখবেন আপনার মুখের সমস্ত ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর হয়ে গেছে।
৭। বেকিংসোডাঃ বেকিং সোডায় রয়েছে প্রাকৃতিক ব্লিচ। যা ব্রণের সমস্ত কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এটি ব্যাবহারের নিয়ম হল প্রথমে দুই টেবিল চামুচ বেকিং সোডার সাথে সামান্য পানি মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর মিশ্রনটি হালকা করে আপনার মুখে দুই থেকে তিন মিনিট পর্যন্ত লাগিয়ে রাখুন।
তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন মিশ্রণটি চোখে না যায়। তারপর মিশ্রনটি শুকিয়ে গেলে পরিস্কার পানি দিয়ে ভালকরে সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলুন।
মুখ ধোয়া হয়ে গেলে সাথে সাথে মুখের উপর ময়েশ্চারাইজার ক্রিম অথবা অলিভ অয়েল লাগিয়ে নিন। আপনি নিয়মিত এটি সপ্তাহে অন্তত দুদিন ব্যাবহার করুন।
৮। অ্যালভেরাঃ অসংখ্য প্রাকৃতিক ঔষধী গুন সমৃদ্ধ উদ্ভিদ হল এই অ্যালভেরা। শরীরের বিভিন্ন রোগ সারাতে এর কোন জুড়ি নেই। মুখের ত্বকের লাবন্যতা ফিরিয়ে আনা সহ ত্বকের যে কোন কঠিন দাগ দূর করতে পারে এই অ্যালভেরা। তাই প্রত্যেকদিন সকালে ও রাতে দুইবার করে শুধুমাত্র অ্যালোভেরার জেল মুখে লাগান। শুকিয়ে যাবার পর মুখ ভাল করে ধুয়ে ফেলুন।
এভাবে নিয়মিত দুই থেকে তিন মাস মুখে অ্যালভেরার জেল ব্যবহার করুন। তারপর যখন খেয়াল করবেন আপনার মুখের ব্রণ ও ব্রণের দাগ চলে গেছে। তখন প্রত্যেকদিন একবার করে সকালে অথবা রাতে শোবার আগে এটি নিয়মিত ব্যবহার করবেন। তাহলে ত্বকের অন্যান্য কোন সমস্যা থাকলে সেগুলো সেরে যাবে।
৯। টমেটো ও শসাঃ টমেটো মুখের ব্রণের জন্য খুবই উপকারি। একটি লাল টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন- এ, বি, কে, সি সহ আরও অনেক ভিটামিন। এছাড়া টমেটোতে আছে লাইসপিন নামক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। তাই এর ব্যাবহারে ত্বক থেকে বিভিন্ন ধরনের দাগ সহ ত্বকের বলিরেখা দূর করে ত্বককে মসৃণ করে তুলতে সাহায্য করে।
ব্যাবহার প্রণালীঃ প্রথমে একটি লাল টমেটোর কিছু অংশ নিয়ে তার থেকে সমস্ত রস বের করে নিন। তারপর তা এক চামুচ শশার রসের সাথে ভালকরে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে নিন। এখন এই মিশ্রণটি আপনার সারা মুখে লাগান। তারপর শুকিয়ে গেলে ১০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
এভাবে সপ্তাহে অন্তত তিন বার এই প্যাকটি মুখে লাগান। এর ফলে মুখের ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর হয়ে যাবে সম্পূর্ণরূপে। এছাড়া এই মিশ্রণটি ব্যাবহারে আপনার রোদে পোড়া ত্বকও সুন্দর হয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতাকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করবে।
১০। লেবুঃ ত্বকের জন্য খুবই উপকারী হল লেবু। লেবুকে প্রাকৃতিক ব্লিচ ও বলা হয়। মুখের ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করতে তাই লেবু হল খুবই কার্যকরী একটি ফল। ত্বকের যত্নে এর উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবেনা।
ব্যাবহার প্রণালীঃ এক চামুচ লেবুর রসের সাথে আধা চামুচ পানি মিশিয়ে একটি তুলার বলের সাহায্যে তা মুখে তিন থেকে চার মিনিট ঘষুন। আপনার ত্বক যদি সেনসিটিভ স্কিন হয় তাহলে লেবুর মিশ্রনের সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে নিতে পারেন। সম্ভব হলে এক চামুচ লেবুর রসের সাথে দুই চামুচ ভিটামিন-ই ক্যাপসুল মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন। তাহলে আরও ভাল উপকার পাবেন।
এছাড়া এক টেবিল চামুচ লেবুর রসের সাথে এক টেবিল চামুচ মধু নিয়ে তার সাথে এক টেবিল চামুচ আমন্ড অয়েল মিশিয়ে নিন। তারপর এর মধ্যে দুই টেবিল চামুচ দুধ একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে মুখে লাগান। তারপর শুকিয়ে গেলে ভাল করে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
এই নিয়মে প্রতিদিন একবার করে পুরা এক সপ্তাহ এই ফেইস প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে মুখে ব্রণ থাকা অবস্থায় দুধ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
মুখের ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করার সহজ এই ১০ টি ঘরোয়া টিপস বেশ কার্যকর ও উপকারী। আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী যে সমস্ত উপাদানগুলি বেশি ভালো বোধ করেন তা ব্যবহার করুন।
মুখের ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করতে আরও কিছু পরামর্শঃ
সর্বদা আপনার মূল্যবান ত্বকের যত্ন নিবেন। ত্বক সুন্দর রাখতে পানির বিকল্প নেই। তাই নিয়মিত বেশি করে পানি পান করুন এবং নিজেকে সুস্থ রাখুন।
আপনি ব্রণে কখনও নখ লাগাবেন না অথবা নখ দিয়ে কখনও চাপ দিয়ে কিছু বের করতে যাবেন না। চুলকানি আসলেও ব্রণে নখের স্পর্শ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন।
এছাড়া আপনি যদি ব্রণের প্রতিকারের জন্য কখনও কোন চিকিৎসকের পরামর্শ বা ট্রিটমেন্ট গ্রহণ করে থাকেন। অথবা ব্রণের দাগ দূর করতে কোনও কিছু ব্যবহার করেন তাহলে অবশ্যই হালকা ভাবে ব্যাবহার করতে হবে।
সূর্যের আলো আমাদের ত্বকের ও ব্রণের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সূর্যের আলোতে ব্রণের দাগ শুকিয়ে ত্বকের উপরে বসে যায়। তাই সূর্যের সংস্পর্শ থেকে সর্বদা নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করবেন।
আর যখনই বাইরে যাবেন তখন মুখে অবশ্যই সানস্ক্রিন ক্রিম লাগিয়ে বের হবেন। এছাড়া মুখের ব্রণ ও ব্রণের দাগ এড়াতে ছাতা, হ্যাট, ওড়না, স্কার্ফ, হিজাব ইত্যাদি দিয়ে নিজের ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলবেন।
1 Comment
It is a great article. My wife are addicted this problem. But when she follow this articles then she get a good result. Thanks admin for this post.