কি খেলে গায়ের রং ফর্সা হয় ? ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও ত্বকের রং ফর্সাকারী খাবারগুলো কি কি তা জেনে নিন। এখানে গায়ের রং ফর্সা করার উপযোগী ২৬ টি খাবার ও খাবারের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
আমাদের মধ্যে অনেকেরই গায়ের রং কালো। এই কালো ত্বকের জন্য অনেককেই মন খারাপ করে বসে থাকতেও দেখা যায়। এইজন্য তারা নানা উপায়ে চেষ্টা করতে থাকেন ফর্সা হওয়ার জন্য। তবে সুন্দর বা ফর্সা হওয়ার আগে আমাদেরকে জানতে হবে কি কি কারনে গায়ের রং বা ত্বকের রং কালো হয়ে থাকে।
গায়ের রঙ বা ত্বকের রং কালো হওয়ার কারণঃ
আমাদের মানবদেহে মেলানিন নামক উপাদানের তারতম্যের কারণে গায়ের রং কালো বা ফর্সা হয়ে থাকে। যাদের দেহে এই মেলানিন যতটা বেশী পরিমাণে থাকে তিনি তত কাল হয়ে থাকেন। আবার যাদের দেহে কম থাকে তারা ফর্সা এবং সুন্দর ত্বকের অধিকারী হয়ে থাকেন। বাইরের বৈরী আবহাওয়া, প্রচণ্ড তাপ বা রোদের কারণে, স্ট্রেসের কারণ সহ বিভিন্ন কারণে দেহের মধ্যে এই মেলানিনের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে গায়ের রং কালো হতে থাকে।
তাই অনেকে বিভিন্ন উপায়ে গায়ের রং সুন্দর করার জন্য অনেক ধরনের নামি দামী প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করেও কোনো ফলাফল পান নি। আবার আপনার ত্বক যদি রুক্ষ হয়ে থাকে তাহলে যত রকম ভাবেই আপনি সাজুন না কেন আপনাকে দেখতে কিন্তু সুন্দর লাগবে না। অথবা আপনার সৌন্দর্যটা বেশিক্ষণ থাকবেনা।
তাই বাইরে থেকে আপনি যতই ত্বকের যত্ন আর রূপচর্চা করেন না কেন সেগুলো আপনাকে সাময়িক ভাবে সুন্দর করলেও সঠিক পুষ্টিকর খাবার গুলো শরীরে গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্থায়ী ভাবে আপনার গায়ের রং এবং গায়ের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিও ধরে রাখা সম্ভব না। তাহলে কি খেলে গায়ের রং ফর্সা হয় ?
আবার দেখা যায় অনেকের কম বয়সেই চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যায়। কপাল কুঁচকে যায় বা সহজে মুছে যায় না। এছাড়া আপনার গায়ের ত্বকের মধ্যে যেই উজ্জ্বলতাটা ছিল সেটা হঠাৎ করেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি চেহারার মধ্যে একটা কালচে ভাবও চলে আসছে। তখন অনেকে কোনো কিছু না ভেবেই শুরু করে দেন নানারকম প্রসাধনীর ব্যবহার।
ফলে দেখা যায় একদিকে যেমন মানসিক টেনশন। আবার অপরদিকে উল্টা পাল্টা ক্রিম ব্যবহারের ফলে ত্বকের লাবণ্য আরও নষ্ট হয়ে যায়। অথচ এসব না করে যদি আপনি খাবারের প্রতি নজর দিতেন, নিয়মিত ব্যায়াম করতেন এবং stress-free লাইফ স্টাইলের প্রতি নজর দিতেন। তাহলে আপনি দ্রুত আপনার ত্বকের সৌন্দর্য ফিরে পাবেন এবং আপনি দ্রুত ফর্সা হয়ে উঠবেন। যার রেজাল্ট হবে দীর্ঘস্থায়ী।
অর্থাৎ কোন কোন খাবারগুলো খেলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে সেই সমস্ত খাবারগুলো আপনাকে বেশী করে খেতে হবে। তাই এখানে আলোচনা করা হলো কি খেলে গায়ের রং ফর্সা হয় ? নিয়মিত কি খেলে আপনি দেখতে অনেক সুন্দর হয়ে উঠবেন এবং আপনার ত্বকের রং উজ্জ্বল দেখাবে। তাহলে চলুন জেনে নেই।
১। পানিঃ পানি আমাদের ত্বকের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি খাবার। তাই প্রতিদিন পরিমাণ মত পানি পান করা জরুরী। প্রয়োজনে একটু বেশি পানি প্রতিদিন পান করুন।
২। নিয়ম মেনে খাওয়াঃ আপনার খাবারের সময় টা প্রতিদিন নির্দিষ্ট রাখার চেষ্টা করুন। অর্থাৎ প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে খেতে যান। তাহলে দেহের হজম প্রক্রিয়া এবং খাবার গ্রহনের মধ্যে সঠিক বেলেন্স বজায় থাকবে। শুধু খাবার খেলেই হবে না। আপনার খাবারগুলিকে ঠিকঠাক মত হজমের সুযোগ দিতে হবে। আর যে খাবারই আপনি গ্রহণ করবেন সেগুলো ভালোভাবে চিবিয়ে খাবেন।
৩। ফলমূলঃ আপনি প্রতিদিন সময়মত খাচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু আপনার খাবারের মধ্যে কোন ফলমূল নেই। তাহলে আপনার গায়ের রং ফর্সা করতে চাইলে এটা বাদ দেয়া যাবে না। মনে রাখবেন, আপনার খাবারের তালিকায় যেন প্রতিদিন দুটি করে ফল থাকে।
৪। ব্যায়াম করুনঃ শরীরকে ফিট রাখতে চাই পর্যাপ্ত ব্যায়াম। তাই রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ শরীর চর্চা করুন। অর্থাৎ আপনার দেহটাকে ফিট রাখুন। তাহলে মন ভালো থাকবে। আর মন ভালো থাকলে শরীরও ভাল থাকবে। সাথে সাথে আপনার চেহারায়ও পরিবর্তন আসবে।
৫। সামুদ্রিক মাছঃ আপনার গায়ের রং ফর্সা করতে চাইলে বিভিন্ন রকম মাছ বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ নিয়মিত খেতে হবে। কারণ সামুদ্রিক মাছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। যা ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে ও আদ্রতা ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আবার মাছের তেল ত্বক সুন্দর করতে সাহায্য করে। তাই মাছের তেল খেতে পারেন। মাছের তেল কে শরীরের জন্য উপকারী তেল বলা হয়।
৬। সশাঃ শসায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ফাইবার ও মিনারেল থাকে। আর থাকে ভিটামিন- এ, সি, কে, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, জিঙ্ক ইত্যাদি। শসা খেলে আপনার শরীর ভেতর থেকে আদ্র থাকে। এছাড়া বাহ্যিক ভাবে ফেসমাস্ক হিসেবে শসার পেস্ট মুখে ব্যবহার করতে পারেন।
৭। বাদাম খানঃ আপনার ত্বক কি রুক্ষ? তাহলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কিছু বাদাম রাখুন। এক্ষেত্রে যে কোন ধরনের বাদামই আপনি খেতে পারেন। সকালে খালি পেটে আপনি তিন থেকে পাঁচটি কাঠ বাদাম, আখরোট, কাজু বাদাম খেতে পারেন। বাদাম ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড এবং ভিটামিন ই এর উৎস। এটি ত্বক ফর্সা আর সুন্দর করতে বেশ ভালো সাহায্য করবে।
৮। ডিমঃ প্রতিদিন সকালের নাস্তায় একটি বা দুটি ডিম সিদ্ধ করে কুসুম সহকারে খান। তাহলে এক মাসের মধ্যে আপনার ত্বক ঝলমল করতে থাকবে। কারণ ত্বক সুন্দর আর ফর্সা করতে ফ্যাটের প্রয়োজন পড়ে। যা ডিমের কুসুমের মধ্যে রয়েছে। আপনি ফেসপ্যাক হিসেবেও ডিমের কুসুম ব্যবহার করতে পারেন।
৯। শাকঃ আপনার ত্বক ভেতর থেকে ফর্সা করতে প্রতিদিন যে কোনো একপদের শাক খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ শাকের পুষ্টি আপনার ত্বককে ফর্সা করতে ও ত্বক সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
১০। শরীরকে ডিটক্স করুনঃ আপনার শরীরকে ডিটক্স করতে চাই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার। এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। যা ঔষধ সেবন করেও সেই পরিমাণ পুষ্টি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায় না। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠেই একটি উপায়ে আপনি শরীরটিকে ডিটক্স করে ফেলতে পারেন।
যেমন- খালি পেটে লেবু, মধু ও গরম পানির মিশ্রণ বানিয়ে খেয়ে নিন। এই উপাদানগুলো আপনার শরীরে প্রবেশ করে কোষ থেকে যে সমস্ত টক্সিন উৎপন্ন হয় সেগুলোকে বের করে দিবে। ফলে আপনার শরীর ডিটক্স লাভ করবে। তবে যাদের গ্যাস্ট্রিক বা আলসার আছে তারা দুপুরের পর ভরাপেটে এটি খেতে পারেন।
তারপরও খেতে সমস্যা হলে লেবুর পরিবর্তে অ্যালোভেরার জেল মিশিয়ে খেতে পারেন। অপরদিকে কিডনি রোগীরা অ্যালোভেরার পরিবর্তে ভিনেগার মিশিয়ে খেতে পারেন। এই খাবারটি আপনার ত্বক সুস্থ রাখতে এবং ত্বক ফর্সা ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
১১। সালাদ খাওয়ার অভ্যাসঃ ত্বকের সৌন্দর্য বর্ধনে সালাতের কার্যকারিতা আমরা কম বেশী সকলেই জানি। তাই প্রতিদিন নিয়মিত সকালের নাস্তায় অথবা বিকালে সালাদ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এই সালাতের মধ্যে রাখবেন শসা, টমেটো গাজর ও সামান্য পরিমাণ সরিসার তেল।
১২। ভিটামিন সি যুক্ত খাবারঃ ভিটামিন- সি সমৃদ্ধ খাবার কে ত্বকের বন্ধু বলা হয়। আপনার ত্বককে ভেতর থেকে সুন্দর করতে ভিটামিন- সি’র কোন বিকল্প নেই। এই ভিটামিন- সি সমৃদ্ধ খাবারগুলো হল সবুজ শাক-সবজি ও ফলমূল। যেমন- আমলকী, ষ্ট্রবেরী, আঙ্গুর, কমলা বা মাল্টা, লেবু, পেয়ারা, জাম্বুরা ইত্যাদি।
এগুলো প্রতিদিন সামান্য করে খাওয়া শুরু করুন ও নিয়মিত খেতে থাকুন। এগুলো আপনার ত্বককে শুধু সুন্দরই করবে না বরং আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বৃদ্ধি করবে। আর শাক সবজির মধ্যে রয়েছে ব্রুকলি, টমেটো, ফুলকপি এবং বিভিন্ন ধরনের শাক ইত্যাদি।
১৩। ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিডঃ এটি ত্বক সুন্দর করতে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে দারুণ উপকারী একটি উপাদান এবং এটি আমাদের দেহের জন্য অনেক প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের শরীরে এটি উৎপন্ন হয় না। তাই নির্দিষ্ট কিছু খাবার গ্রহণের মাধ্যমে শরীরে এটি পৌছাতে হবে।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মি থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে ত্বককে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। এটি আমরা বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিজ্জ তেলের মধ্যে বেশি করে পাব। যেমন- তিসির তেল বা ক্যারোলা অয়েল ইত্যাদি।
আবার সামুদ্রিক তৈলাক্ত মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। যেমন সেলমন ফিশ, টুনা ফিশ, ইলিশ মাছ ও রুই মাছেও প্রচুর পরিমাণে ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড রয়েছে।
১৪। সকালে তেলের ব্যবহারঃ ত্বক সুন্দর রাখতে চাইলে সকালের নাস্তায় আমাদেরকে বেশী বেশী তেলের ব্যবহার কমাতে হবে। অনেকেই আছেন যারা ঘুম থেকে উঠেই নুডুলস, পাস্তা, পরটা ইত্যাদি তেল যুক্ত খাবার দ্বরা সকালের নাস্তা করেন। এগুলো ত্বকের উজ্জলতাকে নষ্ট করে দেয়। তাই চেষ্টা করুন র ফুড খেতে। যেমন- লাল আটার রুটি ইত্যাদি।
১৫। ডিহাইড্রেশন দূর করাঃ আমাদের শরীর হতে ডিহাইড্রেশন দূর করা অত্যন্ত জরুরি। আপনার শরীরে যদি ডিহাইড্রেশন থাকে তাহলে আপনার শরীরের যে টান টান ভাবটা বা ইলাস্টিসিটি রয়েছে সেটা নষ্ট হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশন দূর করার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। আর পানিটা অবশ্যই বসে ও তিন শ্বাসে খেতে হবে। ডিহাইড্রেশন দূর করতে এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস বা কচি ডাবও খেতে পারেন আপনার স্কিনের সৌন্দর্যের জন্য।
১৬। জিঙ্ক এর ঘাটতি পূরণঃ জিঙ্ক এমন একটি ভিটামিন যা আমাদের শরীরে কমে গেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। পাশাপাশি ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন উল্টাপাল্টা খাদ্যাভ্যাসের কারণে শরীরে জিঙ্ক ঠিকমতো প্রবেশ করে না।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ঠিকমতো জিংক গ্রহণ করেন না। তবে এই জিংক আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা থেকেই নেয়া সম্ভব। যেই সমস্ত খাবারে জিংক আছে সেগুলো বেশি করে খেলেই শরীরে জিংকের ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। যেমন- লাল মাংস, পেয়ারা, ডিম, দুধ ইত্যাদি।
১৭। অলিভ অয়েল তেলঃ একটা বিষয় লক্ষ্য করলে দেখবেন তেল ছাড়া যেন আমার চলতেই পারিনা। প্রতিদিন যে কোন রান্নায় আমাদেরকে তেলের ব্যবহার করতেই হয়। যেহেতু তেল আমাদের লাগবেই তাহলে আপনার সুস্বাস্থ্য ও ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অলিভ অয়েল তেল খুব উপকারী। আপনার সামর্থ্য থাকলে অলিভ অয়েল তেল নিয়মিত রান্নায় ব্যাবহার করতে পারেন। তবে যেই তেলই খান না কেন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য সব ধরনের তেলই যতটা সম্ভব কমিয়ে খাওয়াই উত্তম।
১৮। গ্রিন টিঃ গ্রিন টি হল এক ধরণের এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার। গ্রিন টি আপনার ত্বকের সজীবতা রক্ষা করতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি এর মধ্যে anti-ageing উপাদান বিদ্যমান রয়েছে যা আপনার বয়সের বুড়িয়ে যাওয়া কে ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাই এই খাবারটি অবশ্যই আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
১৯। কলাঃ কলা ত্বকের জন্য খুব উপকারী একটি ফল। কলায় আছে ফাইবার, ক্যারোটিনয়েড এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট। কলার আরও আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি সহ অসংখ্য পুষ্টি উপাদান। এটি ত্বকের মলিনতা দূর করতে সাহায্য করে। তাই প্রত্যেকদিন দুটি করে কলা খাওয়ার অভ্যাস করুন। আপনি কাঁচা কলার ভর্তাও খেতে পারেন।
২০। গাজর ও মিষ্টি কুমড়াঃ গাজর এবং মিষ্টিকুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন থাকে। যা শরীরে প্রবেশ করে ভিটামিন এ তে পরিনত হয়। গাজর ত্বকের টিস্যুগুলোকে মেরামত করে ও সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে। ফলে নিয়মিত গাজর খেলে ত্বক হবে উজ্জ্বল ও ফর্সা। এছাড়া গাজর ও মিষ্ট কুমড়া চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে।
২১। জিরা পানিঃ জিরায় এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আছে যা শরীরে জমে থাকা দূষিত উপাদান দূর করতে সাহায্য করে। জিরায় আয়রন বিদ্যমান থাকায় রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়িয়ে রক্তশূন্যতা দূর করে। ত্বকে দূষিত পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গেলে ত্বকে ব্রণ দেখা দেয়। ত্বক কালচে হয়ে যায়। ফলে আপনার সৌন্দর্যও নষ্ট হয়ে যায়।
জিরা পানি ত্বক ও দেহকে অভ্যন্তরীণভাবে সুস্থ রাখে এবং ত্বক টান টান রাখতে সাহায্য করে। জিরায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিএজিং উপাদান থাকে। তাই জিরা পানি পান করলে অকালে বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ হয়। জিরা পানি ত্বকের ও শরীরের জ্বালাপোড়া ভাবকে দূর করতে সাহায্য করে।
জিরা পানি তৈরির নিয়মঃ এক লিটার পানির মধ্যে দেড় টেবিল চামুচ জিরা মিশিয়ে চুলায় দিয়ে ফুটাতে থাকুন। তারপর জিরার পানি কিছুটা কমে যেমন- পৌনে এক লিটার হয়ে গেলে সাথে সাথে নামিয়ে ঠান্ডা করে ছেঁকে নিন। এই জিরা পানি কুসুম গরম বা ঠাণ্ডা দুই রকম ভাবেই খাওয়া যায়। জিরা পানিকে খাওয়ার আগে আরও সুস্বাদু করার জন্য এর সঙ্গে সামান্য চিনি, বিট লবণ, গোল মরিচ গুঁড়া, লেবুর রস ও ধনিয়াপাতা বা পুদিনাপাতা মিশিয়ে খেতে পারেন।
২২। করল্লাঃ করল্লা খেতে তিতা হলেও এর পুষ্টিগুণ অনেক। করল্লায় রয়েছে শক্তি বর্ধক উপাদান, ভিটামিন- সি যা ত্বকের ও চুলের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সক্ষম। করল্লা ত্বকের কোলাজেন গঠনে সাহায্য করে এবং চোখের দৃষ্টি শক্তিকে উন্নত করে। ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বেড়ে ত্বক সুন্দর ও ফর্সা হয়ে উঠে। তাই সবজি হিসাবে নিয়মিত করল্লা খেতে থাকুন।
২৩। থানকুনি পাতাঃ থানকুনি পাতাকে একটি ঔষধি গাছ হিসেবে আমরা সবাই জানি। এই পাতার ভর্তা ও তরকারিতে খাওয়া যায়। বিভিন্ন অসুখে এই পাতার রস উপকারী। এছাড়া ত্বক ভেতর থেকে ফর্সা করতে অত্যন্ত কার্যকরী এই থানকুনি পাতা। তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে থানকুনি পাতার রস নিয়মিত এক মাস খেলে আপনার ত্বক ভেতর থেকে ফর্সা হওয়া শুরু হবে। আপনি ব্লেন্ড করে এর রস খেতে না চাইলে এই পাতা কাঁচাও খেতে পারেন অথবা ভর্তা বানিয়ে ভাতের সাথে নিয়মিত খেতে পারেন।
২৪। পাকা পেঁপেঃ পাকা পেঁপে তে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে। নিয়মিত পেঁপে খেলে প্রাক্রিতিকভাবেই ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে এবং ত্বক ফর্সা হয়। পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। নিয়মিত পাকা পেঁপে খেলে ব্রণ ও বয়সের ছাপ দূর হয়ে যায়। এছাড়া বাজ্জিকভাবে ফেসমাস্ক বানিয়েও ব্যাবহার করা যায়।
২৫। হেলদি স্কিন ড্রিঙ্কসঃ এই হেলদি স্কিন ড্রিঙ্কসটি কয়েকটি ফলের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে। এই ড্রিঙ্কস বা জুসটির নিয়মিত পান করলে আপনার ত্বক ভেতর থেকে দ্রুত ফর্সা হয়ে উঠবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। স্কিনের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এই হেলদি স্কিন ড্রিঙ্কসটি তৈরি করতে লাগবে যথাক্রমে সমপরিমাণ একবাটি করে শসা, গাজর, টমেটো এবং মালটার রস।
এখন মালটা বাদে সবগুলো উপাদান একত্রে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তারপর মালটা চিপে তার রসগুলো পরে মিশিয়ে নিতে হবে। ব্যাস এভাবেই তৈরী হয়ে গেল ত্বক ফর্সা ও সুন্দর করার জন্য হেলদি স্কিন ড্রিঙ্কস। এই ড্রিঙ্কস বা জুসটি আপনি প্রতিদিন নাস্তার পর খেতে পারেন।
২৬। আপেলঃ কথায় আছে গাল দুটো আপেলের মত সুন্দর। শুধু আপনার গাল দুটোই নয় আপনার গায়ের সম্পূর্ণ ত্বক আপেলের মত ফর্সা ও উজ্জল করতে আপেলের ভুমিকা অনস্বিকার্য। প্রতিদিন অন্তত একটি করে আপেল খেলে শরীর সুস্থ থাকার পাশাপাশি ত্বক ভেতর থেকে ফর্সা এবং উজ্জ্বল সুন্দর হয়ে উঠে।
আরও পড়ুনঃ ত্বকের সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আপেলের ভুমিকা
আশাকরি কি খেলে গায়ের রং ফর্সা হয় তা সবাই পুরোপুরি জেনে ও বুঝে গেছেন। এতক্ষণ যে খাবারগুলোর কথা আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো যদি আপনি আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখেন এবং পাশাপাশি ব্যায়াম ও stress-free লাইফ লিড করেন তাহলে আপনার ত্বকের সৌন্দর্যের জন্য অনেক উপকারিতা বয়ে নিয়ে আসবে এবং আপনার ত্বক দ্রুত ফর্সা হয়ে উঠবে।
তাই এই খাবারগুলো নিয়মিত একমাস খেলেই দেখবেন আপনার ত্বক আগের চেয়ে কত ফর্সা আর সুন্দর হয়ে উঠেছে। তাই আর দেরী নয়, আজ থেকেই খাওয়া শুরু করুন এই সমস্ত খাবারগুলি।