অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করুন এখন থেকে ঘরে বসে খুব সহজে। অনেকেই আছেন এখনও নিজের বা সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করেন নি। আবার হয়তবা নিজের জন্ম নিবন্ধন করেছেন কিন্তু সন্তানের জন্য জন্ম নিবন্ধন করার চিন্তা করছেন।
অথচ নানান কর্মব্যস্ততার জন্য আপনি এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় বা পৌরসভায় যাওয়ার সময় পাচ্ছেন না। অথবা চাকরী বা বেবসার জন্য আপনি আপনার এলাকা থেকে দূরে অবস্থান করেন। আবার ভাবছেন জন্ম নিবন্ধন করতে গেলে অনেক সময় লাগতে পারে। যদি বিভিন্ন রকমের হয়রানি হতে হয়। কিংবা সময়মত জন্ম নিবন্ধন কপি হাতে না পাওয়ার শঙ্কা।
আমরা কিন্তু বর্তমানে একটি ডিজিটাল যুগে বসবাস করছি। ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল সেবা এখন আমাদের দোর গোড়ায়। এই ডিজিটাল সেবারই একটি অন্যতম সেবা হল অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন ও গ্রহণ করার সুবিধা। আপনি আপনার স্থানীয় এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় বা পৌরসভায় না গিয়ে যে কোন স্থান থেকে অনলাইনের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন।
সুতরাং এখন থেকে মোবাইল অথবা ল্যাপটপের সাহায্যে আপনি অনলাইনের মাধ্যমে নিজেই নিজের জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে পারবেন ও জন্ম নিবন্ধন কপি তৈরি করতে পারবেন ঘরে বসেই। এজন্য আপনাকে কিছু ডকুমেন্ট বা তথ্য অনলাইনে প্রদান করে করতে হবে। আপনার নিজের জন্ম নিবন্ধনের জন্য আপনার বাবা-মা এর জন্ম নিবন্ধন অথবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয় পত্রের কপিও লাগবে।
যদি ১৮ বছরের নিচে কারো জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়ে। তবে সেই ক্ষেত্রে বাবা-মার জন্ম সনদ অবশ্যই প্রয়োজন হবে। তাহলে বুঝা গেল যে ১৮ বছরের নিচে কারো জন্ম নিবন্ধন করতে গেলে তার পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন করা না থাকলে তাদেরও জন্ম নিবন্ধন করে তারপরে সন্তানের জন্য আবেদন করতে হবে।
অর্থাৎ আপনি যদি ১৮ বছরের উর্ধ্বে হন তাহলে বাবা-মার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়েই অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করতে পারছেন। এক্ষেত্রে তাঁদের জন্ম নিবন্ধন না থাকলেও হবে।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করা এখন কতটা সহজ। তাই আপনি যদি নতুন করে নিজের অথবা সন্তান সহ অন্য যে কারো জন্ম নিবন্ধন করতে চান। তাহলে আপনাকে প্রথমে বাংলাদেশ সরকারের নির্দিষ্ট ওয়েব সাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন আবেদনের ওয়েব সাইটের লিঙ্কঃ https://bdris.gov.bd/br/application। এই ঠিকানাটি আপনার ব্রাউজারে লিখে প্রবেশ করুন। এড্রেসবারে লিঙ্ক বা ঠিকানা লিখতে সমস্যা মনে করলে এখানে ক্লিক করুন। তাহলে নিচের চিত্রের মত জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন এর পেইজটি আপনার সামনে চলে আসবে। এখানে পেইজের উপরে কিছু মেনু আপনি দেখতে পাবেন।
সেখানে থাকা জন্ম নিবন্ধন লেখা মেনুর উপর ক্লিক করুন (নিচের চিত্রে তীর চিহ্ন দিয়ে তা দেখানো হয়েছে)। তাহলে আরো কিছু সাব মেনু আপনার চোখে পড়বে। মূলত এই মেনুর ভিতরে থাকা সাব মেনুগুলো দ্বারাই আপনি নতুন জন্ম নিবন্ধন করা থেকে শুরু করে জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সংশোধন এবং বাতিলসহ যাবতীয় কাজ করতে পারবেন।
আমরা যেহেতু অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধন করার জন্য আবেদন করছি। তাই প্রথমে দেয়া জন্ম নিবন্ধন আবেদন লেখা সাব মেনুতে ক্লিক করব। তাহলে নিচের চিত্রের ন্যায় নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন নামে একটি পেইজ দেখতে পাবেন। এখানে কিছু নিয়মাবলী দেয়া আছে। আবেদন করার শুরুতে নিয়মগুলি একটু কষ্ট করে পড়ে নিলে আপনার আবেদন করতে সুবিধা হবে।
নতুন করে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদনের পেইজে আসার পর নিচের দিকে লক্ষ্য করলে দেখবেন আপনি জন্মনিবন্ধন সনদ কোন ঠিকানার অফিস হতে সংগ্রহ করবেন বা করতে চান সেটা নির্দিষ্ট করে দিতে বলছে। সেক্ষেত্রে আপনি নিচের তিনটি অপশনের মধ্যে আপনার সুবিধামত ঠিকানা টি সিলেক্ট করে পরবর্তীতে ক্লিক করে দিন। তাহলে পুনরায় নিচের চিত্রের ন্যায় নতুন একটি আবেদন ফরম চলে আসবে।
এই আবেদন পত্রটি অতি সাবধানতার সহিত পড়ে ও বুঝে তারপর সবগুলো ঘর পূরণ করতে পরামর্শ দেয়া হল। এখানে ফর্মের মধ্যে খেয়াল করলে দেখবেন কিছু প্রশ্ন বা চাহিদার পাশে ছোট করে লাল স্টার চিহ্ন দেয়া আছে। তার মানে হল ওই ঘরগুলো আপনাকে অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদনকারী ব্যক্তির নাম পূরণের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ফর্মে লক্ষ্য করলে দেখবেন আবেদনকারীর নাম দুটি অংশে (নামের প্রথম ও শেষ অংশ) ভাগ করে লিখতে বলা আছে। ধরুন আপনার নামে দুই অংশই আছে। তাহলে সহজেই ফর্ম পূরণ করতে পারবেন।
কিন্তু আপনার নামটি যদি একক শব্দ বা তিন শব্দের সমন্বয়ে হয় তখন কি করবেন? সে ক্ষেত্রে নাম এক শব্দের হলে লাল স্টার চিহ্নিত দ্বিতীয় ঘরটিতে লিখতে হবে। অর্থাৎ স্টার চিহ্নিত ঘরটি আপনাকে পূরন করতে হবে।
আর নামের যদি তিনটি অংশ হয় তাহলে পুরো নামের প্রথম শব্দ প্রথম ঘরে আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অংশ একত্রে দ্বিতীয় ঘরে বসাতে হবে। যেমন- আপনার নাম যদি হয় আব্দুল্লাহ আল মামুন। তাহলে ফর্মের প্রথম ঘরে লিখবেন আব্দুল্লাহ এবং দ্বিতীয় ঘরে একত্রে লিখবেন আল মামুন।
তেমনিভাবে একই নিয়মে ইংরেজিতে নাম পূরণ করার ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এভাবে জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফর্মের পরবর্তী অন্যান্য অংশগুলো পূরণ করা একেবারেই সহজ। আপনি পড়ে সহজেই পূরণ করে ফেলতে পারবেন।
ফরম পূরণ করা হয়ে গেলে পুনরায় ভালকরে একবার বানান সমূহ চেক করে নেবেন সবকিছু ঠিক আছে কিনা। তারপর ফর্মের নিচে পরবর্তী বাটনে চাপ দিয়ে পরবর্তী পেজে চলে যাবেন। নিচের চিত্রের ন্যায় একটি পাইজ আসবে। এই পেইজে আপনার বা জন্ম নিবন্ধন কারী ব্যাক্তির পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধনের তথ্য আলাদা করে এন্ট্রি করে দিতে হবে। এখানেও আপনাকে লাল রঙের স্টার চিহ্নিত ঘর গুলো অবশ্যই পুরন করতে হবে।
এখানে একটি বিষয় মনে রাখা দরকার যে, নিবন্ধনকারী ব্যক্তি যদি ১৮ বছরের নিচে হয় তাহলে পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর অবশ্যই দিতে হবে। তবে যাদের জন্ম ২০০০ সালের পর তাদের জন্ম নিবন্ধন করতে অবশ্যই পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন লাগবে। তা না হলে অন্য ঘরগুলোতে আপনি পূরণ করার জন্য যেতে পারতেন না। আর বয়স যদি ১৮ বছরের উপরে হয় তাহলে শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়েই আপনি পরবর্তী পেজে যেতে পারতেন ও তথ্য নিয়ে নিবে।
টিক চিহ্ন দিয়ে পূরণ করলেই নিচে আরেকটি চেক বক্স আসবে। যেখানে লেখা থাকবে জন্মস্থান এর ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা একই। এই লেখা ঘরটিও টিক মার্ক দিয়ে দিবেন। যদি টিক মার্কটি না দিয়ে দেন তাহলে পুনরায় আপনাকে নতুন করে নিবন্ধনকারী ব্যক্তির স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা দিতে হবে। তারপর পরবর্তীতে ক্লিক করে চলে যাবেন। পরবর্তী পেইজটি কেমন হবে তার চিত্র নিচে দেয়া হল।
উপরের চিত্রে নতুন একটি পেজ দেখতে পাবেন আবেদনকারীর প্রত্যয়ন নামে। এই পাইজে থাকা সমস্ত তথ্য একবার ভাল করে পড়ে নিয়ে তারপর পূরণ করতে হবে। কিছুতেই ভুল করা যাবেনা। তবে যদি আবেদনকারী বেক্তি আপনি নিজেই হন তাহলে নিজ দিয়ে দিবেন।
তারপর পর্যায়ক্রমে আপনার মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল (যদি থাকে) ঠিকানা দিয়ে পরবর্তী পাইজে চলে যাবেন। এভাবেই আমরা অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদনের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি।
তাহলে নতুন একটি পেইজে আপনার অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদনকৃত সম্পূর্ণ ফর্মটি এক নজরে দেখার জন্য আপনার সামনে চলে আসবে। আপনি প্রত্যেকটি অংশ ভালকরে পড়ে দেখে বুঝে তারপর ফর্মটি সাবমিট করবেন। বানানের কোন ভুল পেলে পুনরায় পেছনে গিয়ে সংশোধন করে আবার আসতে হবে। নচেৎ সংশোধন করার সুযোগ থাকবেনা।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে দিন। আপনার অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদনপত্রটি সফলভাবে সাবমিট হয়ে থাকলে নিচের চিত্রের ন্যায় একটি Success লেখা বার্তা আসবে। আবার সাথে সাথে আপনাকে কিছু প্রয়োজনীয় বার্তা প্রেরন করবে নিচের চিত্রের মতন করে। এছাড়া আপনার দেয়া মোবাইল নম্বরে একটি বার্তাও চলে যাবে। মোবাইলে প্রেরণকৃত বার্তা বা ম্যাসেজটি নিজের মত করে সংরক্ষণ করে নিবেন। কারন এগুলো পরবর্তীতে আপনার কাজে লাগবে।
তারপর আপনার অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদনপত্রটি প্রিন্ট অপশনে ক্লিক করে প্রিন্ট করে নিন। অথবা ড্রাইভে সংরক্ষণ করে রাখুন। পরবর্তীতে কোন দোকান থেকে আপনার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন কপিটি প্রিন্ট করে নিবেন। অনলাইনে আবেদনপত্র সফলভাবে সাবমিট হবার পর ১৫ দিনের মধ্যে আপনার জন্ম নিবন্ধন আবেদনপত্রটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রিসিভ করবে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদনপত্রটি রিসিভ করে থাকলে পুনরায় আপনার মোবাইলে আবেদনপত্র রিসিভ হয়েছে মর্মে একটি বার্তা পাঠিয়ে দিবে। অথবা আপনি আপনার ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় বা পৌরসভায় যাবেন। তারপর অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফর্মটি প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সহ নিয়ে দেখাবেন। তাহলে সেখান থেকে আপনাকে জন্ম নিবন্ধনের কপি প্রদান করবে।
অনলাইনে পূরণকৃত আপনার জন্ম নিবন্ধনের বর্তমান অবস্থা কিভাবে দেখবেনঃ
আপনি অনলাইনে আপনার বা আপনার সন্তানের জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন ফর্ম সঠিকভাবে পূরণ করে সাবমিট করে দিয়েছেন। কিন্তু আপনি জানেন না সেই আবেদনটি বর্তমানে কি অবস্থায় আছে। আপনার এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদনটি রিসিভ করেছে কিনা। সেটা চাইলে সহজেই আপনি জেনে নিতে পারেন।
সেটা জানার জন্য জন্ম নিবন্ধনের নির্দিষ্ট ওয়েব সাইটে যেতে হবে অথবা এখানে ক্লিক করুন। জন্ম নিবন্ধনের নির্দিষ্ট ওয়েব সাইটটি আপনার সামনে চলে আসবে। এখানে জন্ম নিবন্ধন মেনুতে ক্লিক করুন। কিছু সাব মেনু আসবে। সেখান থেকে জন্ম নিবন্ধন আবেদনের বর্তমান অবস্থা তে ক্লিক করুন। তাহলে নিচের চিত্রের ন্যায় আবেদনপত্রের অবস্থা নামে নতুন একটি পেইজ আসবে।
এখানে আবেদনপত্রের ধরনের ঘরে ড্রপ ডাউন মেনুর মধ্য হতে জন্ম নিবন্ধন আবেদন এ ক্লিক করুন। তারপর অ্যাপলিকেশন আইডি নম্বর দিন (যেটা আপনি জন্ম নিবন্ধন আবেদনপত্র সাবমিটের পর স্বয়ংক্রিয় ভাবে পেয়েছিলেন)। তারপর আপনার জন্ম তারিখটি দিন। তারপর দেখুন বাটন এ ক্লিক করুন। তাহলে আপনার অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদনপত্রটি বর্তমানে কি অবস্থায় আছে জানতে পারবেন।
2 Comments
১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত আমাদের জাতীয় পরিচয় প্রত্র হিসাবে জন্ম নিবন্ধনকেই আমরা বুঝি । জন্ম নিবন্ধনে আমাদের জন্ম তারিখ থেকে শুরু করে আমাদের স্থায়ী-অস্থায়ী ঠিকানা , পিতা-মাতার নাম , বোর্ড নিউনিয়ন , একটা ব্যাক্তির যত তথ্য থাকে , সব মিলিয়ে একটা জাতীয় ডকুমেন্ট তৈরি । এইটা আমরা আমাদের আইডি কার্ড তৈরি না করা পর্যন্ত বেশি ব্যবহার করি । জন্ম নিবন্ধন সাধারনত জন্মের পর মা বাবারা তৈরি করে রাখে । এতে আমাদের সকল তথ্য সঠিকভাবে উল্যেখ থাকে । জন্ম নিবন্ধন নিয়ে আমরা আমাদের স্কুল জীবন পার করে ফেলি । কিন্তু যখন আমরা ইন্টারমিডিয়েড কিংবা অন্যান্য কোন চাকরি বা সরকারি প্রতিষ্টানে যুক্ত হতে গেলে আমাদের প্রয়োজন হয় এন আইডি কার্ডের ।নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করুন ।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে কমপ্লিট আর্টিকেল। ধন্যবাদ।