Verification: 604f510ca357bb64

পা ফাটা দূর করার টিপস ও ৫টি সহজ উপায়

পা ফাটা দূর করার টিপস ও ৫টি সহজ উপায়। ছেলে মেয়ে উভয়েরই হাত পা বিশেষ করে পা ফাটার সমস্যা থাকে। মানুষের বয়স দিন দিন যতই বাড়ে এই পা ফাটার সমস্যাও ততোই বাড়তে থাকে। কারও আবার সারা বছর আর সব ঋতুতেই হাত পা ফাটতে দেখা যায়। তবে শীতকালে এই পা ফাটার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তাই শীত আসলে প্রত্যেকেরই উচিত পা ও হাতের বিশেষ যত্ন নেয়া।

শীতকালে বাতাসের আদ্রতা বেশী থাকায় ত্বক দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায়। আর পা ফাটা দূর করার টিপস না জানার ফলে হাত পা ফাটার এমন সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ নিয়ে সবার মাঝে দুশিন্তার যেমন শেষ নেই তেমনি সহজে এই পা ফাটা ভালও হয়না। এভাবে ধীরে ধীরে পায়ের সৌন্দর্যকেও নষ্ট করে দেয়।

দেখা গেছে এই পা ফাটা রোগটি সারাতে অনেকে আবার অনেক ধরনের চিকিৎসা বা পদ্ধতি নিয়েও ভাল ফলাফল পাননি।

তবে আমরা যদি আমাদের পা সর্বদা পরিস্কার রাখি ও একটু যত্ন নেই তাহলে এই সমস্যা হতে চিরতরে মুক্তি পেতে পারি। তাই আপনাদের জন্য পা ফাটা রোধের জন্য কয়েকটি কার্যকরী পদ্ধতি নিয়ে এখন আলোচনা করব। যা আপনি আপনার ঘরে বসে নিজেই এপ্লাই করতে পারবেন এবং দ্রুত ফল পাবেন।

তাহলে চলুন জেনে নেই চিরতরে পা ফাটা দূর করার টিপস। আর কিভাবে ঘরে বসে আপনি আপনার পা ফাটা রোগ হতে চিরতরে মুক্তি পেতে পারেন।

১। সরিষার তেল ও মোমঃ ত্বকের যত্নে সরিষার তেল যুগ যুগ ধরে ব্যাবহার হয়ে আসছে। সরিষার তেল পা ফাটা রোধ করতে অত্যন্ত কার্যকরী। সরিষার তেল ফাটা ত্বকের ময়েশ্চার লক করে দেয়। অর্থাৎ ত্বকের মধ্যে আদ্রতা ধরে রাখে। এতে করে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়ে পা ফাটা বন্ধ হয়ে যায়।

ব্যাবহার প্রণালীঃ প্রথমে একটি পাত্রে দেড় টেবিল চামুচ সরিষার তেল নিয়ে নিন। তারপর এর সাথে আধা চামুচ মোমের গুড়া নিয়ে ভালকরে মিশিয়ে গরমকরে মোমগুলো গলিয়ে সরিষার তেলের সাথে ভালকরে মিশিয়ে নিন।

তারপর এই গরম তেলটি ঠাণ্ডা করে প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার ফাটা পায়ের গোড়ালিতে ম্যাসেজ করে করে ভালকরে লাগিয়ে নিন। তারপর সকালে ঘুম থেকে উঠে পরিস্কার করে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত এক সপ্তাহ এই তেল ব্যাবহারে আপনার পা ফাটা সম্পূর্ণরূপে ভাল হয়ে যাবে।

২। ভেসলিন ও লেবুঃ যে কারো শুষ্ক ত্বককে মসৃণ ও কোমল রাখতে ভেসলিন খুব উপকারী। ইহা আমাদের প্রত্যেকের বাসায়ই থাকে। ভেসলিন ত্বকে ময়েশ্চার ধরে রাখে। আর লেবুতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। যা ত্বকের পুষ্টি ও ফেটে যাওয়া রোধের জন্য খুবই উপকারী।

ব্যাবহার প্রণালীঃ প্রথমে এক টেবিল চামুচ ভেসলিনের সাথে এক টেবিল চামুচ লেবুর রস ভালকরে মিশিয়ে নিন। আরও ভাল ফলাফল পেতে মিশ্রণটির সাথে এক চামুচ ফেইস ম্যাসেজ অয়েল অথবা অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন। (ফেইস ম্যাসেজ অয়েল কিভাবে আপনারা ঘরে বসে নিজেরাই তৈরি করতে পারেন তার একটি পোস্ট আমি পরবর্তীতে দিয়ে দেব)।

এখন সবগুলো উপকরণ ভালকরে মিশিয়ে নিয়ে আপনার পায়ের ফেটে যাওয়া স্থানে লাগান। এটি প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার দশ মিনিট পূর্বে ভাল করে ম্যাসেজ করে লাগিয়ে রাখতে হবে। এভাবে নিয়মিত একটানা পনের দিন এই পদ্ধতিটি আপনার পায়ে এপ্লাই করুন। তাহলে আপনার পা ফাটা সম্পূর্ণরূপে ভাল হয়ে যাবে।

৩। এলভেরা ও গ্লিসারিনঃ ত্বকের যত্নে অসংখ্য প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ উদ্ভিদ হল এলভেরা। এলভেরায় রয়েছে ত্বককে ময়েশ্চারাইজিং করার ক্ষমতা। যা আপনার ত্বককে সুন্দর এবং তুলতুলে নরম রাখতে সাহায্য করে। আর ত্বকের ফাটা কমাতে গ্লিসারিনের উপকারিতা কতখানি তা আমাদের সবারই জানা। চলুন জেনে নেই পা ফাটা রোধ করতে কিভাবে আমরা এগুলো ব্যাবহার করব।

ব্যাবহার প্রণালীঃ প্রথমে একটি পাত্রে দুই টেবিল চামুচ এলভেরা জেল নিয়ে তার সাথে এক টেবিল চামুচ গ্লিসারিন দিয়ে দিন। তারপর ভাল করে চামুচ দিয়ে নেড়ে নেড়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। যদি কারও হাতও ফেটে গিয়ে থাকে তাহলে মিশ্রণটির সাথে সামান্য হলুদ গুড়া মিশিয়ে নিয়ে হাতে বা ত্বকে লাগাতে পারেন। শুধুমাত্র পা ফাটা রোধ করতে মিশ্রণটির সাথে হলুদ গুড়া না দিলেও চলবে।

এখন এই মিশ্রণটির মধ্যে দুইটি ভিটামিন-ই ক্যাপস্যুল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি আপনি আপনার ফেটে যাওয়া পায়ে ব্যাবহারের পাশাপাশি শরীরের ফেটে যাওয়া ঠোঁট সহ অন্যান্য অংশেও লাগাতে পারেন। এটি শুধু আপনার হাত পা ফাটাই রোধ করবেনা। এটি আপনার ত্বককে মসৃণ কোমল ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করবে।

৪। তুথপেস্ট ও লবণঃ তুথপেস্ট শুধু দাঁতই পরিস্কার করেনা। এটা পা ফাটা সহ পায়ের সমস্ত ময়লাও পরিস্কার করতে দারুন কাজ করে। আর লবণের মধ্যে থাকা উপাদান পেস্টের সাথে মিশে ত্বকের সমস্ত ময়লা ও জীবাণু ধংস করে পা ফাটা রোধ করবে।

ব্যাবহার প্রণালীঃ প্রথমে আপনার ঘরে থাকা যেকোনো তুথপেস্ট এক চামুচ নিয়ে তার সাথে দুই টেবিল চামুচ লবণ দিয়ে নিন। তারপর এর সাথে সামান্য হলুদ গুড়া ও বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। এখন সবগুলো উপাদান একত্রে ভালকরে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। আরও ভাল ফলাফল পেতে এই মিশ্রণটির সাথে একটি কাগজী লেবুর রস পুরোটা দিয়ে মিশিয়ে দিন।

এখন এই মিশ্রণটি আপনার পায়ের গোড়ালি সহ সম্পূর্ণ পায়ে ভালকরে মিশিয়ে পাঁচ থেকে সাত মিনিট ধরে অপেক্ষা করুন। তারপর যে কোন ধরনের পা ঘসুনি দিয়ে কিছুক্ষণ ঘষতে থাকুন। এর ফলে আপনার পায়ের সমস্ত ময়লা আর মরা চামড়া উঠে গিয়ে নতুন ও পরিস্কার চামড়া বের হবে। আর আপনার পা হবে আগের চাইতে আরও কোমল ও মসৃণ।

এভাবে নিয়মিত এক সপ্তাহ গোসলের আগে এই মিশ্রণটি ব্যাবহার করুন। এই পা ফাটা দূর করার টিপস টি ফলো করলে দেখবেন আপনার পা ফাটা সম্পূর্ণরূপে দূর হয়ে গেছে।

৫। পেঁয়াজের রসঃ দ্রুত পা ফাটা ভাল করতে পেঁয়াজের রস খুব ভাল কাজ করে। কারণ পেঁয়াজে আছে ভিটামিন- A, C এবং E. এই ভিটামিনগুলি ত্বকের সুরক্ষার জন্য খুব উপকারী। চলুন যেনে নেই কিভাবে এই পেয়াজের রস আপনার ফাটা পায়ে ব্যাবহার করবেন।

ব্যাবহার প্রণালীঃ প্রথমে হালকা কুসুম গরম পানিতে গোলাপজল মিশিয়ে তার মধ্যে দশ মিনিটের জন্য আপনার পা গুলিকে ডুবিয়ে রাখুন। এতে আপনার পায়ের ত্বক নরম হবে। তারপর দশ মিনিট পরে শুকনো কাপড় দ্বারা পা দুইটি ভালকরে মুছে শুকিয়ে নিন।

এখন একটি পেঁয়াজ কে ব্লেন্ডারে অথবা সিল-পাটায় পিষে পেস্ট তৈরি করে নিন। তবে পেঁয়াজের সাথে কোন পানি ব্যাবহার করা যাবেনা। এখন এই পেস্ট আপনার ফাটা পায়ের গোড়ালিতে ফাটা স্থানসমূহে আঙ্গুল দিয়ে ভালকরে লাগিয়ে নিন। এই পদ্ধতিটি একটানা তিন চার দিন প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে ব্যাবহার করতে হবে। তাহলে আপনার পা ফাটা সম্পূর্ণরূপে ভাল হয়ে যাবে।

পা ফাটা দূর করার টিপস সম্পর্কিত আরও কিছু পরামর্শঃ

নিয়মিত পা ও হাতের যত্ন নিন। পা সবসময় পরিস্কার রাখতে চেষ্টা করুন। বাইরে গেলে পা ও হাতে মুজা ব্যাবহার করুন। ফলে পর্দা করাও হল আবার পা ও হাত পরিস্কার থাকল। তবে নিয়মিত মুজা পড়লে মুজা ও পায়ে দুর্গন্ধ তৈরি হয়। তাই মুজা পড়ার আগে পায়ে ট্যালকম পাওডার মেখে নিলে আর দুর্গন্ধ বেরুবেনা।

অনেকের আবার পায়ের পাতা শক্ত থাকে। ফলে তাদের পা ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। তাই প্রতি সপ্তাহে একবার গোসলের সময় অথবা অবসর সময়ে পা ঘসুনি দ্বারা নিয়মিত পা ঘষুন।

নিয়মিত হাতে ও পায়ে ভেসলিন, লোশন, অলিভওয়েল অথবা স্কিন ম্যাসেজ অয়েল ব্যাবহার করুন। এতে আপনার পায়ের ত্বক সবসময় নরম ও মসৃণ থাকবে। 

 

Leave a Comment

error: Content is protected !!