Verification: 604f510ca357bb64

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা কেমন হওয়া উচিত।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা কেমন হওয়া উচিত। ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ সম্পর্কে আমরা সবাই কম বা বেশি অবগত আছি। এই রোগকে মধুমেহ রোগও বলা হয়ে থাকে। কারণ এ রোগটি বর্তমানে এতটাই বিস্তার লাভ করেছে যে, বেশিরভাগ পরিবারই এ রোগটি অন্তত দুই একজন সদস্যদের মধ্যেই রয়েছে। দিন দিন এ রোগের প্রকোপ আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।

একবার এই ডায়াবেটিস রোগ হলে এর থেকে সম্পূর্ণ রূপে আরোগ্য লাভা করা যায় না। তবে নিয়ম মেনে এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যে রোগ হলে রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে সবসময় এটাই লক্ষ্য রাখা উচিত যে আমাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ যেন বৃদ্ধি না পায়। তাই সেভাবেই আমাদেরকে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা এবং ডায়েট প্ল্যান তৈরি করতে হবে।

বর্তমানে যারা এই রোগে ভুগছেন তারা প্রতিনিয়ত এই চিন্তার মধ্যে থাকেন যে, তারা কি খাবেন আর কি খাবেন না। কোন খাবারটি খেলে তার সুগারের পরিমাণ বেড়ে যাবে ইত্যাদি নানাবিধ টেনশনে ভুগে থাকেন সারাক্ষণ। কোন খাবার তাদের সামনে দিলে তারা সবার আগে এই চিন্তাটাই করেন যে, তারা কি সেই খাবারটি গ্রহণ করতে পারবেন? নাকি পারবেন না। অথবা এটাও ভাবেন যে, সারাদিনের মধ্যে কিভাবে খেলে তাদের ডায়াবেটিস রোগটি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

আরও পড়ুনঃ

১। সুন্দর থাকার খাবার যেগুলো খেলে আপনি সবসময় সুন্দর থাকবেন

২। শরীর থেকে চর্বি কমানোর উপায়। কোন তেল খেলে চর্বি কমে

৩। রসুন খাওয়ার উপকারিতা

 

তাই এখানে আলোচনা করা হলো আপনার যদি ডায়াবেটিস হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা কেমন হবে? আপনি কি খেতে পারবেন এবং কোন কোন খাবারগুলো আপনার খাওয়া উচিত হবে না। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে এখানে এমন একটি ডায়েটিং প্ল্যান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যা ফলো করলে একদিকে আপনার সুগার কম থাকবে এবং অন্যদিকে শরীরে পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় নিউট্রিশিয়ান্সগুলোর কথাও লক্ষ্য রাখা হয়েছে। 

কেউ যদি এক মাস এই ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা টি সঠিকভাবে অনুসরণ করেন তাহলে খুব সহজে আপনার ব্লাড সুগার কন্ট্রোলে চলে আসবে। তার সাথে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনও সহজ হয়ে যাবে। সুতরাং একটু ধৈর্য ধরে আর্টিকেলটি পড়ুন আর জেনে নিন সব নিয়মকানুন। আপনাদের বুঝার সুবিধার্থে আজকের এই টপিকটিকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করে বোঝানো হয়েছে। যেমন-

০১। সুগার কমাতে Breakfast এর পূর্বের খাবার।
০২। সুগার কমানোর Breakfast।
০৩। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দুপুর ও রাতের খাবার।
০৪। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রনে বিকালের নাস্তা। এবং
০৫। ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা যে খাবারগুলো রাখা যাবে ও যাবে না।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ

০১। সুগার কমাতে Breakfast এর পূর্বের খাবারঃ সকালে ঘুম থেকে উঠেই অনেকের একটি কমন অভ্যাস হলো চায়ের সাথে টা দিয়ে মানে বিস্কুট সহ খাওয়া। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন যে, এই চায়ের সাথে বিস্কুট খাওয়ার ফলে আপনার সুগার যেমন বাড়তে পারে। তেমনি সুগার কমেও যেতে পারে। তাই শরীরে ব্লাড সুগার কমাতে চাইলে ঘুম থেকে উঠেই সকালের প্রথম খাবারটি বা প্রথম অভ্যাসটি ডায়াবেটিস ফ্রেন্ডলি হতে হবে।

তাহলে কিভাবে এই অভ্যাসটিকে ডায়াবেটিস কমানোর উপায় হিসেবে গড়ে তুলবেন ? আপনার যদি সকালে চা খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে আপনাকে মোট কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। চায়ের মধ্যে প্রধানতম একটি উপাদান রয়েছে তার নাম হলো এন্টিঅক্সিডেন্ট। যা আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে অসম্ভব রকম সাহায্য করবে। কিন্তু এই চায়ের মধ্যে আমরা কিছু ক্ষতিকর উপাদান যোগ করে তারপর খাই। তা না হলে আমরা চা খেতে পারিনা।

তার মধ্যে একটি হল ক্যাফেইন যা চায়ের মধ্যে জন্মগতভাবেই বিদ্যমান থাকে। আর অন্যটি আমরা যুক্ত করি যার নাম হচ্ছে চিনি। এ দুটি উপাদানই ডায়াবেটিস কমানোর পথে বাধা দিতে পারে। সকালের চা কে শতভাগ ডায়াবেটিসের জন্য উপযোগী করে খেতে হলে এই দুটি উপাদানই কমাতে হবে বা নির্মূল করতে হবে।

তাহলে ক্যাফেইন কিভাবে নির্মূল করবেন ? ক্যাফেইন আপনি চাইলে পুরোপুরি নির্মূল করতে পারবন না। তাই আপনি বাজার থেকে চা কেনার সময়েই যেই চা পাতাটি কিনবেন। সেটা হল গ্রিন টি। এই গ্রিন টির মধ্যে ক্যাফেইন তুলনামূলকভাবে কম থাকে। তবে চা তৈরির সময় চা পাতার পরিমাণ কম দিন। এতে ক্যাফেইনের পরিমাণ আরো কম থাকবে। ফলে ক্যাফেইন শরীরে কম প্রবেশ করবে।

আর চায়ে চিনি খাওয়ার প্রবণতা কিভাবে নির্মূল করবেন ? ধীরে ধীরে চিনি ছাড়া চা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রথম কয়েক দিন চিনি কম করে দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন। তারপর চায়ের মধ্যে চিনি দেয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দিন। এরপর দেখবেন চিনি ছাড়া চাই আপনার কাছে খেতে ভালো লাগছে। ডায়াবেটিস কমানোর উপায় হিসেবে চিনি ছাড়া চা এর কোন বিকল্প নেই।

আরও পড়ুনঃ

১। ওজন কমানোর উপায়

২। গর্ভাবস্থায় কি খেলে সন্তান মেধাবী হবে

৩। গর্ভবতী মায়ের আদর্শ খাবার তালিকা

তবে বাজারে এখন চিনির বিকল্প হিসেবে প্রাকৃতিক নানা উপাদান পাওয়া যায়। যা আপনি অনায়াসে চায়ের সাথে মিশিয়ে স্বাদ করে খেতে পারেন। যেমন স্টেভিয়া পাতা বা স্টেভিয়া পাতার নির্যাস, মংক ফ্রুট নির্যাস ইত্যাদি। এগুলো আপনার চাকে মিষ্টি করবে কিন্তু ব্লাড সুগার বাড়াবে না। এগুলোর এন্টি ডায়াবেটিক উপাদানগুলো আপনার ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করবে।

চায়ের সাথে টা বা কোন কিছু না হলে যেন আমরা বাঙ্গালীদের চলেই না। আর এই টা মানে বিস্কুট খাওয়ার অভ্যাসই আপনার সুগার নিয়ন্ত্রণে বাধা হতে পারে। আপনি চায়ের সাথে যে বিস্কুট টা খাচ্ছেন তার প্রধান উপাদান হচ্ছে ময়দা। যা ডায়াবেটিসের খাবার হিসেবে বিপদ জনক। এছাড়া আরো থাকে চিনি, চিনির সিরাপ সহ নানা ধরনের প্রিজারভেটিভ উপাদান ও ফ্লেভার। যা আপনার ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে বাধা। তাই ডায়াবেটিস ডায়েট এর শুরুটা কখনই আপনার এরকম খাবার দিয়ে করা উচিত না। তাই চায়ের সাথে বিস্কুট খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিয়ে একান্ত যদি কিছু একটা খেতেই হয় তাহলে বাদাম, ছোলা ইত্যাদি খেতে পারেন।

০২। সুগার কমানোর breakfast: একজন ডায়াবেটিস রোগীর Breakfast এর জন্য আপনাকে কিছু সাজেশন দেওয়ার চেষ্টা করছি। এই খাবারগুলো একদিকে আপনার নিউট্রিশিয়ান্সের চাহিদা মিটাবে এবং অন্যদিকে সুগার নিয়ন্ত্রনেও সাহায্য করবে। যেমন-

ক) উটসের খিচুড়িঃ আমরা খিচুড়ি বলতেই বুঝি চাল ও ডাল দিয়ে তৈরি খিচুড়ি। তবে আপনি যদি চালের পরিবর্তে এখানে উটস ব্যবহার করেন তাহলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন। ভাবছেন কীভাবে ? গবেষণায় জানা গেছে উটসের তৈরি খিচুড়িতে চাল দিয়ে তৈরি খিচুড়ির থেকে সুগার বাড়ানোর কার্বোহাইড্রেট 22 শতাংশ কম থাকে। অপরদিকে ফাইবার 27 শতাংশ বেশি থাকে এবং প্রোটিন 26 শতাংশ বেশি থাকে। এগুলো আপনার শরীরে সুগারের মাত্রা কমাতে সাহায্য করবে। আর এই উটসের খিচুড়ির সাথে নানা রকম সবজি যোগ করলে উটসের তৈরি খিচুড়ি একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য আদর্শ Breakfast খাবার হয়ে যাবে।

খ) রুটিঃ Breakfast এ রুটি খাওয়া যেতে পারে। আর রুটির সাথে তরকারি হিসেবে বিভিন্ন রকম সবজি রাখতে হবে। এর সাথে একটি ডিম রাখতে পারেন। ডিম আপনি সিদ্ধ করে বা ভেজে ইত্যাদি যে কোন ভাবেই খেতে পারেন। আর যদি ভেজে খান তাহলে সয়াবিন তেলে না ভেজে ঘি দিয়ে ভেজে খেতে হবে। আর রুটি তৈরির আটা যদি লাল গমের আটা হয় তাহলে খুবই ভালো হয়। এগুলোতে ফাইবার ও Anti Diabetic অ্যান্টি অক্সিডেন্টগুলি বেশি পরিমাণে থাকে। যা একজন ডায়াবেটিস রোগীর ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।

০৩। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দুপুর ও রাতের খাবারঃ ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ও ডায়েট প্ল্যানে দুপুর ও রাতের খাবারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা বাঙালিরা লাঞ্চ ও ডিনারেই অতিরিক্ত পরিমাণে খেয়ে থাকি বা খেতে পছন্দ করি। আর সবথেকে বেশি ভুল এখানেই হয়ে থাকে। ফলে ডায়াবেটিস নিরাময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

লাঞ্চ বা ডিনার যে খাবারই হোক না কেন প্লেটের অর্ধেক আপনাকে শাকসবজি দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। শাক বা সবজি আপনি কাঁচা বা সালাদ হিসাবে খেতে পারেন অথবা তরকারিতে রান্না করে আবার সিদ্ধ করেও খেতে পারেন। আর যে কোন ভাজা পোড়া খাবার থেকে দূরে থাকুন এবং কম খাওয়ার অভ্যাস করুন। দুপুর ও রাতের খাবারে অর্ধেক পরিমাণ শাক সবজি রাখলেনত মানে হল আপনি অনেকটা ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট নিশ্চিত করে ফেললেন। যা আপনার ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করবে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

এরপর আসুন প্রোটিন সম্পর্কে। আপনাকে প্রোটিন গ্রহণের কথাও ভাবতে হবে। ডায়াবেটিস হলে কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে প্রোটিন খাওয়া উচিত নয়। তাই বলে একেবারে বাদ দেওয়া উচিত নয়। আপনাকে পরিমিত আকারে প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। কারণ ইনসুলিন এর কার্যক্ষমতাকে বাড়াতে অল্প পরিমাণে প্রোটিন আপনাকে গ্রহণ করতেই হবে।

আপনার খাবারে অর্ধেক শাক সবজির সাথে বাকি অর্ধেক এর মধ্যে অর্ধেক বা চার ভাগের এক ভাগ যেন প্রোটিনযুক্ত খাবার অবশ্যই থাকে। যেমন- বিভিন্ন রকমের ডাল, পনির, সামুদ্রিক মাছ, মুরগির মাংস ইত্যাদি ভালো প্রোটিনের উৎস। ডায়াবেটিসের ভয়ে কার্বোহাইড্রেট কে না বলে দিলে কিন্তু হবে না। তাই অবশিষ্ট অংশ অর্থাৎ চার ভাগের একভাগ হবে ভাত অথবা রুটি। 

অনেকেই বলে ডায়াবেটিস হলে আপনাকে ভাত খাওয়া বন্ধ করে রুটি খেতে হবে। কিন্তু আসলে সত্য যে ভাত ও রুটি এই দুটোর মধ্যেই কার্বোহাইড্রেট থাকে। তাই আপনার ডায়াবেটিস হলে আপনাকে সেটি পরিমিত আকারে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করতে হবে। তাই আপনি ভাত বা রুটি যাই খান না কেন আপনাকে পরিমিত আকারে খেতে হবে।

তাই আপনাকে প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় কার্বোহাইড্রেট অবশ্যই রাখতে হবে। তবে সেটা পরিমাণে একেবারেই কম। তবে এখানে সাদা চালের পরিবর্তে ঢেঁকিছাটা চাল হলে ভালো হয়। আপনি যদি লাঞ্চ ও ডিনার এর সময় একটু নিয়ম মেনে চলেন তাহলে ডায়াবেটিস কমানো আপনার জন্য সহজ হবে এবং তা পুরোপুরি আপনার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। পরবর্তীতে সবকিছু আপনার অভ্যাস এ পরিণত হয়ে যাবে। তখন আপনি চাইলেও আর বেশি বেশি খেতে পারবেন না।

০৪। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে বিকালের নাস্তাঃ দিনের প্রধান তিন বেলার খাবার বাদেও বেশিরভাগ ডায়াবেটিস রোগীরা বিকালের নাস্তার অভ্যস্ত। এই নাস্তার সময় আপনি যে কোন ভারী খাবার গ্রহণ করলে কিন্তু চলবে না। সেটার জন্য আপনাকে নিয়ম মেনে খাবার খেতে হবে। তাই এখন আপনাকে ডায়াবেটিস ফ্রেন্ডলি নাস্তার ধারণা দেয়া হবে। যা আপনাকে সুগার কমাতে অতিরিক্ত সাহায্য করবে।

আপনি নাস্তা হিসেবে যে কোন একটি ফল খেতে পারেন। এখানে পেয়ারা একটি ভালো ফল হতে পারে আপনার জন্য। আবার একটিমাত্র ফল না খেয়ে অনেকগুলো ফল কেটে টুকরো করে একত্রে মিশিয়েও খেতে পারেন। যেমন বিভিন্ন প্রকার বাদাম, ডাল ভাজা ইত্যাদি সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। মনে রাখবেন বিকালের নাস্তা মানেই হল অল্প পরিমানে খাওয়া। অর্থাৎ পেট ভরে খাওয়া যাবেনা। এই সময়ে ভেজিটেবল সুপ ও চিকেন স্যুপও আপনি খেতে পারেন।

অনেকের মধ্যে এই ধারণাটা রয়েছে যে ডায়াবেটিস রোগীরা কোন ফল খেতে পারবেন না। এই ধারণাটা সম্পূর্ণরূপে একটি ভুল ধারণা। আপনি যে কোন সিজনাল ফলমূল খেতেই পারেন। তবে হ্যাঁ কিছু ফল আছে যেগুলোতে মিষ্টির পরিমাণ বেশি থাকে। সেগুলোই আপনাকে এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন- আম, কলা ইত্যাদি। এছাড়া শসা, টমেটো, স্ট্রোবেরি, পাকা পেঁপে, গাজর, আপেল, কমলা, মাল্টা, পেয়ারা সহ ইত্যাদি যে সমস্ত ফলে চিনির পরিমাণ কম থাকে সেগুলো আপনি অনায়াসে খেতে পারেন।

ডায়াবেটিস রুগীর জন্য টক দই একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। কারণ টক দই ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। এতে চিনির পরিমাণ কম থাকায় এটি রক্তে চিনির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। বিকেলের নাস্তায় সমুচা বা স্যান্ডউইচের সাথে টক দই খাওয়া যেতে পারে। 

এছাড়া লেবু বা লেবু জাতীয় ফলগুলো ডায়াবেটিস প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, শরীরে ভিটামিন- সি এর অভাবে অনেক সময় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে। তাই লেবু অথবা লেবু জাতীয় ফল প্রতিদিন খেলে শরীরে ভিটামিন- সি এর অভাব দূর হয়ে যায়। ভিটামিন- সি যুক্ত ফোলগুলো হচ্ছে জাম্বুরা, কমলা, মাল্টা, লেবু ইত্যাদি। এগুলো ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিনের মতো সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রয়োজনে প্রতিদিন সকালে অথবা বিকালের নাস্তায় এক গ্লাস লেবুর শরবত খেতে পারেন।

০৫। ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা যে খাবারগুলো রাখা যাবে ও যাবে নাঃ বেশ কিছু খাবার আছে যেগুলো আপাতত দৃষ্টিতে দেখতে স্বাস্থ্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু সেগুলো আসলে ডায়াবেটিস রুগীর খাবার হিসেবে ভাল নাও হতে পারে। চলুন তাহলে সেই খাবারগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। যেমন-

  • প্যাকেটে রাখা বিভিন্ন রকম প্রক্রিয়াজাত খাবার ও বেকারি আইটেম যত কম খাওয়া যায় ততই মঙ্গল। এই খাবারগুলো কার্বোহাইড্রেটে পূর্ণ থাকে এবং পুষ্টিগুণও কম থাকে। এগুলতে বিভিন্ন রকম প্রিজারভেটিভ ও ক্ষতিকারক ফ্লেভার মিশানো থাকে যা ডায়াবেটিস কমাতে বাধা দেয়। খাবারগুলো আপনার জন্য অস্বাস্থ্যকর। বিশেষ করে দেখা যায় সবাইকে নানা রকম বিজ্ঞাপন দিয়ে খেতে উদবুদ্ধ করা হয় এইভাবে যে, এটা সম্পূর্ণ অর্গানিক, সুগার ফ্রি, কোলেস্টরেল ফ্রি, ফ্যাট ফ্রি, ন্যাচারালস ইত্যাদি। এগুলোই প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে। তবে আপনার খাবারের তালিকা কেমন হবে সেটা আপনাকেই জেনে ও বুঝে আলাদা করে নিতে হবে।
  • ফলের জুস না খেয়ে সরাসরি ফল খান। কারণ ফল হল সম্পূর্ণ ন্যাচারাল খাবার।
  • কোমল পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকস একেবারেই খাওয়া যাবেন না। এগুলো না খেয়ে তৃষ্ণা এড়াতে শুধু পানি পান করুন। কারণ এগুলতে প্রচুর চিনি দেয়া থাকে।
  • ময়দার তৈরি খাবার যেমন- নুডলস, পাস্তা, চাওমিন, ম্যাগি যত কম খাবেন আপনার ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে আপনি ততো এগিয়ে থাকবেন।
  • বাইরের তৈরি যে কোন খাবার কম খাওয়ার অভ্যাস করুন। ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন। ভালো কিছু খেতে ইচ্ছা হলে পরিবারের সাথে সবাই মিলে উৎসব করে অনুষ্ঠান করে খান।
  • যে খাবারগুলো খেলে শরীরে ক্যালরির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় সে খাবারগুলো খাওয়া আপনাকে বন্ধ করতে হবে।
  • তরল শর্করা জাতীয় খাবার অর্থাৎ যেগুলো খেলে সরাসরি আপনার রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়তে পারে সে জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত নয়। যেমন- মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার, মধু, আইসক্রিম, কোলড্রিংস, চিনি, গুড়, কেক, খেজুরের গুড় (খেলে খুব সামান্য খেতে পারেন) ইত্যাদি খাবার পরিহার করুন।
  • বিভিন্ন ফ্যাট জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। যেমন- গরু বা খাসির মাংস এর পরিবর্তে আপনি দেশি মুরগির মাংস খেতে পারেন। কারণ দেশি মুরগির মাংসের মধ্যে চর্বির পরিমাণ কম থাকে।
  • আপনার যদি অ্যালকোহল এর অভ্যাস থাকে তাহলে সেটাও ছাড়তে হবে। এগুলো যদি আপনি বাদ দিতে পারেন তাহলে আপনার রক্তের সুগারের পরিমাণ কম থাকবে এবং আপনি ভালো ফিল করবেন।

ডায়াবেটিস হলে আপনি কি খাবেন আর কি খাবেন না সবকিছু একেবারে বলা মুশকিল। তারপরও আপনাকে ডায়াবেটিস এর ডায়েট প্ল্যান নিয়ে একটা ধারনা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সবচেয়ে ভালো হয় একজন অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ানের সাথে পরামর্শ করে সুন্দর একটি স্বাস্থ্যসম্মত ডায়েট প্ল্যান সাজিয়ে নেয়া।

ডায়াবেটিস হলে আপনি কি কি খাবার খেতে পারবেনঃ ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা বলতে ডায়াবেটিস হলে কিছু খাবার আপনাকে  বুঝে শুনে খেতে হবে। কিছু খাবার আছে কম খেতে হবে। আবার কিছু আছে বেশী করে খেতে পারবেন। যেমন-

  • প্রতিদিন সকালের নাস্তায় একটি ডিম বা ডিমের সাদা অংশ আপনি খেতে পারেন। ডিমের সাদা অংশে উচ্চ মাত্রায় চর্বিহীন প্রোটিন অথচ খুব কম পরিমানে কার্বোহাইড্রেট থাকে।
  • ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড যুক্ত মাছ (সামুদ্রিক মাছ ) আপনি অনায়াসে খেতে পারেন। বিশেষ করে ওয়াইল্ড স্যামন ফিস খুব উপকারী।
  • রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস দুধ আপনি খেতে পারবেন তবে ফ্যাট মুক্ত হলে ভাল।
  • এছাড়া ভিটামিন সি যুক্ত খাবার আপনি সবসময় খেতে পারবেন।
  • কিছু খাবার আছে যা আপনার ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করবে। যেমন- মেথি দানা। এই এই মেথি দানা খেলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়া দারচিনি, ত্রিফলা, আমলকি, তুলসী, অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এগুলো খেলে ডায়াবেটিসের জন্য ভালো।
  • সবজির মধ্যে আলুতে কার্বোহাইড্রেট বেশী থাকায় তা পরিমাণে কম খাবেন। এছাড়া শাক সবজী বেশী খাবেন। মেথি শাক ও পালংশাক ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পরিচিত একটি খাবার। এছাড়া বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, কেপসিকাম, ঢেঁড়স বেশী করে খেতে পারলে আপনার ডায়াবেটিস অনেক নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব উপকারী একটি সবজী হল ব্রকলি। এই ব্রকলি ডায়াবেটিসের সাথে লড়াই করে রক্তে শর্করার পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া ব্রকলি হৃদরোগের বিরুদ্ধেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • রান্নার ক্ষেত্রে অলিভ অয়েল তেলে রান্না করে খাবার খেতে পারলে আপনার জন্য ভাল। যদিও এটি একটি ব্যয়বহুল অর্থাৎ আপনার খরচটা একটু বেশী হবে। তবে চেষ্টা করবেন রান্নায় সয়াবিন তেলের পরিমাণ কম দিয়ে রান্না করতে।
  • আরো আছে চিয়া সিড। এটি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই উপকারী। কারণ এর মধ্যে ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড থাকে।
  • ডায়াবেটিসের রুগীরা রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত করল্লা খেতে পারেন। 
  • যে কোন ধরনের বাদাম ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী। যেমন চিনা বাদাম, কাজু বাদাম, আখরোট ইত্যাদি। একটি গবেষণা থেকে জানা যায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রায় ২১ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে এই বাদাম। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কমপক্ষে ১ আউন্স পরিমান আখরোট অথবা কাজু বাদাম খেতে পারলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভাল কাজ করে। আবার নিয়মিত বাদাম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমবে।

মূলত ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা এরকমই হওয়া উচিত। এছাড়া অনেক কিছু টপস হয়তো ছাড়া পড়ে গেছে। তারপরও চেষ্টা করুন এগুলো মেনে চলার। সবচাইতে জরুরি যে বিষয় সেটি সেটি হল শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম। আপনাকে সকালে ও বিকালে নিয়ম করে কিছুটা শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করতে পারলে আপনার ডায়াবেটিস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এই নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনই আপনাকে ভালো ও সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!