জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করুন খুব সহজে ঘরে বসে অনলাইনে। অনলাইনে এই নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন করা এখন খুবই সহজ। তাই সবাইকে আগেই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন অফিসে না গিয়ে প্রথমে অনলাইনে সংশোধনের আবেদন সম্পন্ন করে তারপর সংশ্লিষ্ট অফিসে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।
এতে করে একদিকে ভুল ত্রুটি যেমন কম হবে, অপরদিকে কাজও দ্রুত হবে। আপনি এখান থেকে সংশোধনের নিয়মটি ফলো করে নিজেই আপনার নিজের সহ অন্য যে কারও জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে দিতে পারবেন।
আমরা যারা জন্ম নিবন্ধন করেছি তাদের অধিকাংশ জন্ম নিবন্ধনেই কিছু না কিছু ভুল রয়েছে। পূর্বে অর্থাৎ জন্ম নিবন্ধন ডিজিটালাইজ করার পূর্বে হাতে লেখা জন্ম সনদে ভুল কম ছিল। কারণ তখন জন্ম নিবন্ধন ফরম টি ছিল বাংলায় এবং হাতে লেখা। কোথাও কোন বানান বা তথ্যে কোন ভুল হয়ে গেলে সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে সেটা সংশোধন করে পুনরায় আরেকটি জন্ম নিবন্ধনের কপি নেয়া গেছে।
কিন্তু জাতীয় পরিচয় পত্রের ন্যায় জন্ম নিবন্ধন সনদকেও যখন ডিজিটাল জন্ম সনদে রূপান্তর করা হয়। তখন জন্ম নিবন্ধন বই বা রেজিস্টার হতে দেখে দেখে সবার জন্মের তথ্য এবং অন্যান্য ডাটাসমূহ অনলাইনে আপডেট করা হয়। তখন টাইপিং এর সময় এই ভুলগুলি হয়ে গেছে। আর তাই আপনি চাইলেই আগের মত আপনার ইচ্ছামত তা সংশোধন করতেও পারবেন না।
এখন জাতীয় পরিচয় পত্রের পাশাপাশি জন্ম নিবন্ধন সনদও বাংলা এবং ইংরেজি দুই ফর্মেটেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে দরকার হবে। আর যেহেতু সরকার জন্ম নিবন্ধন পত্রের সকল তথ্য এখন নিজস্ব ডিজিটাল সার্ভারে সংগ্রহ করে রাখছে। ফলে অন্য কেউ চাইলেই কাউকে নকল জন্ম নিবন্ধন তৈরি করে প্রতারণা করতে পারবে না। সুতরাং নিঃসন্দেহে এটি একটি ভাল উদ্যোগ বলা যায়।
তাই যাদের জন্ম নিবন্ধন করার পর ভুল ধরা পড়েছে তারা চাইলে এখন থেকে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করে তাদের জন্ম নিবন্ধনের ভুল হওয়া তথ্যগুলো সংশোধন করে পুনরায় নতুন করে আরেকটি জন্ম নিবন্ধন কপি নিতে পারবেন। তবে সবার জন্য পরামর্শ হল আপনি যেহেতু জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করছেনই তাহলে সাথে সাথে আপনার বাংলা জন্ম নিবন্ধনটি সংশোধনের সাথে ইংরেজিতেও আবেদন করে জন্ম নিবন্ধনের ইংরেজি কপিটিও নিয়ে নিবেন।
আরও পড়ুনঃ
কিভাবে আপনার বাংলা জন্ম নিবন্ধনটি ইংরেজিতে তৈরি করবেন।
কিভাবে অনলাইনে ই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন।
তবে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন এর জন্য আপনাকে নগদ অথবা চালানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি পরিশোধ করতে হবে। আর এই সংশোধনের সুযোগ থাকছে সর্বোচ্চ চারবার (বর্তমান সময় পর্যন্ত)। ইতিপূর্বে কিন্তু এই ভুল সংশোধনের প্রক্রিয়াটি এত সহজ ছিল না।
তখন আপনাকে আগে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা অথবা সিটি কর্পোরেশন হতে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন এর আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হত। তারপর সেটি পূরণ করে জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দিতে হতো। তারপর সেখান থেকে আপনার জন্ম নিবন্ধন এর সংশোধিত কপিটি গ্রহণ করতে হতো। এর ফলে অনেক ভোগান্তিও পোহাতে হতো।
তাহলে কিভাবে আপনারা আপনাদের জন্ম নিবন্ধনের ভুল হওয়া তথ্য সমূহ অনলাইনে গিয়ে সংশোধন করবেন চলুন দেখে নেই। এখানে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চিত্র সহ বিস্তারিত ভাবে দেখানো হয়েছে সবকিছু। আপনি ঘরে বসে কিংবা যে কোন প্রান্ত থেকে মোবাইল বা কম্পিউটার এর মাধ্যমে অনায়াসেই আপনার জন্ম নিবন্ধনের যে কোন ভুল হওয়া তথ্য সংশোধন করতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়মঃ
এজন্য প্রথমেই আপনাকে বাংলাদেশ সরকারের নির্দিষ্ট ওয়েব সাইটটিতে প্রবেশ করতে হবে। জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদনের ওয়েব সাইটের লিঙ্কঃ https://bdris.gov.bd/br/application এই ঠিকানাটি আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজারে লিখে প্রবেশ করুন। এড্রেসবারে লিঙ্কটি দিতে সমস্যা মনে করলে এখানে ক্লিক করুন।
তাহলে নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন নামে একটি পেইজ বা জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ফরম টি আপনার সামনে চলে আসবে। এখানে পেইজের উপরে কিছু মেনু আপনি দেখতে পাবেন। আপনি জন্ম নিবন্ধন লেখা মেনুর উপর ক্লিক করুন (নিচের চিত্রে তীর চিহ্ন দিয়ে তা দেখানো হয়েছে)। তাহলে আরো কিছু সাবমেনু আপনার চোখে পড়বে। মূলত এই জন্ম নিবন্ধন মেনুর ভিতরে থাকা সাবমেনুগুলো দ্বারাই আপনি নতুন জন্ম নিবন্ধন করা থেকে শুরু করে জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সংশোধন, জন্ম নিবন্ধন সংশোধন যাচাই এবং বাতিলসহ যাবতীয় কাজ করতে পারবেন।
চিত্রে দেখানো তীর চিহ্নিত মেনুতে ক্লিক করে মেনুর ভেতরে থাকা সাবমেনু জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সংশোধন আবেদন লেখা লিঙ্কের উপরে ক্লিক করুন। তাহলে পুনরায় নিচের চিত্রের ন্যায় নতুন একটি পেজ চলে আসবে জন্ম তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন নামে। এখানে থাকা কিছু নিয়মাবলী আপনার চোখে পড়বে। এই নিয়মাবলীগুলো শুরুতে আপনি কষ্ট করে পড়ে নিলে আপনার অনলাইনে আবেদন করতে সুবিধা হবে।
এখানে একটি বিষয় বলে রাখা দরকার। সেটা হল, যদি আপনার জন্ম নিবন্ধনটি ডিজিটাল সার্ভারে এন্ট্রি করা থাকে তাহলে আপনি অনলাইনে আপনার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে পারবেন। নচেৎ আপনাকে আগে আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদটি ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধনে পরিণত করে নিতে হবে।
কিভাবে আপনি অনলাইনে আবেদন করে আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ ডিজিটাল করবেন চিত্রসহ তার পূর্ণাঙ্গ ধাপ এই ওয়েব সাইটে দেওয়া আছে। এই লিংকে ক্লিক করে দেখে আসতে পারেন। আপনি যেহেতু আপনার নিজের জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সংশোধন করতে চান। তাহলে আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ উল্লেখ করে নিচের অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করুন।
আপনার জন্ম নিবন্ধনটি অনলাইন হয়ে থাকলে (উপরের চিত্রে নিচের দিকে দেখানো লাল রঙের তীর চিহ্নিত স্থানে) আপনার নাম সহ আলাদা একটি ট্যাবে Show করবে। তখন আপনি নামের ডান পাশে থাকা নির্বাচন করুন বাটনে ক্লিক করলেই ডিসপ্লেতে Pop-Up আকারে একটি নিশ্চিতকরণ বার্তা আপনাকে প্রেরণ করবে। তখন কনফার্ম এ ক্লিক করতে হবে।
তাহলে আপনার সম্পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ করে দেওয়ার জন্য নিচের চিত্রের মতন নতুন একটি পেইজ চলে আসবে।
এখানে স্টেপ বাই স্টেপ আপনার সম্পূর্ণ ঠিকানা নির্দিষ্ট করে দিয়ে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন। তাহলে সংশোধিত তথ্য নির্বাচন করার জন্য নিচের চিত্রের ন্যায় নতুন আরেকটি পেইজ আসবে আপনার সামনে।
এখানে আপনি জন্মনিবন্ধনের কোন বিষয়টি সংশোধন করতে চান সেটা বিসয় এর ঘরে নির্বাচন করে দিতে হবে। আর সংশোধনের কারন এর ঘরে ভুল লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল কথাটি নির্দিষ্ট করে দিবেন। একাধিক বিষয়ে সংশোধনের জন্য নিচে থাকা + আরও তথ্য সংযোজন করুন লিখা বাটনে ক্লিক করে যুক্ত করে দিতে পারেন।
তথ্য উল্লেখ করতে কোন ভুল হয়ে গেলে ডান দিকে থাকা ডিলিট বাটনে ক্লিক করে পুনরায় নতুন করে বিষয় সিলেক্ট করে দিতে পারেন। তারপর পেইজের নিচের দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন সেখানে আপনার জন্মস্থান, বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ সহ বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ করতে বলছে। আপনি সবগুলো অপশন পূরণ করা শেষে পুনরায় একবার ভালো করে দেখে নিবেন কোথাও কোনো ভুল আছে কিনা।
আবেদনাধিন ব্যক্তির সহিত সম্পর্ক এর ঘরে নিজ কোথাটি নির্দিষ্ট করে দিন। সব গুলো ঠিকঠাক থাকলে আপনার মোবাইল নম্বর ও ইমেইল ঠিকানা উল্লেখ করুন। তারপর আপনাকে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন এর জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট এর কপি জমা দিতে হবে। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেয়ার জন্য +সংযোজন লেখা বাটনের উপর ক্লিক করে সেগুলো আপলোড করে দিন।
তবে আবেদনের শুরুতে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের ধরন বুঝে সেই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বা ফাইল আপনার ড্রাইভে রেখে তারপর আবেদন শুরু করবেন। যেমন- নাম অথবা জন্ম তারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন পড়বে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি।
আপনার প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সংযোজন করে ডান পাশে থাকা Start এ ক্লিক করলেই সেই ডকুমেন্টটি আপনার আবেদনের সাথে যুক্ত হয়ে যাবে। এছাড়া জন্ম নিবন্ধনের অন্যান্য ভুল সংশোধনের জন্য আপনার কি ধরনের ডকুমেন্টের প্রয়োজন পড়বে, তার তথ্য আবেদনের পূর্বেই নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা অফিস হতে কষ্ট করে জেনে নিয়ে তারপরে অনলাইনে আবেদন করুন। তাহলে আপনার আবেদন করতে সুবিধা হবে।
এরপর আসুন পেমেন্ট অপশনে। এখানে নগদ প্রদান ও চালানের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে পারবেন। যদি চালানের মাধ্যমে ফি জমা অথবা পরিশোধ করতে চান তাহলে আপনাকে আগে ব্যাংকে গিয়ে চালানের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে তারপর সেই চালানোর তথ্য দিয়ে তারপর আবেদন করতে হবে। আর যদি ক্যাশ সিলেক্ট করেন তাহলে জন্ম সনদ আনার সময় নগদ টাকা পরিশোধ করে আনতে পারবেন।
তাই পেমেন্ট অপশন আপনার পছন্দমত সিলেক্ট করে সাবমিট এ ক্লিক করে দিন। তবে Pay In Cash করাটাই ভালো হবে। আপনার আবেদনের সবকিছু সঠিকভাবে সাবমিট করা হয়ে থাকলে সাথে সাথে আপনাকে নিচের চিত্রের মত একটি Success বার্তা পাঠানো হবে। যা আপনার মোবাইল নম্বরেও চলে যাবে।
এই তথ্য গুলোর একটি স্ক্রিনশট নিয়ে রেখে দিন। কারণ পরবর্তীতে এগুলো আপনার কাজে লাগবে। এখানে চিত্রের নিচের দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন আবেদনপত্র প্রিন্ট নামে একটি অপশন আছে। চিত্রে তীর চিহ্ন দ্বারা দেখানো হয়েছে। সেখানে ক্লিক করে আপনার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করা কপিটি প্রিন্ট করে নিন অথবা আপনার ড্রাইভে সংরক্ষণ করে রাখুন।
এছাড়া আপনাকে একটি নির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে দেয়া হবে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ ঐ তারিখের (১৫ দিন) মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধকের কার্যালয়ে দাখিল করতে বলবে। আর এভাবেই আপনি খুব সহজে বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে ঘরে বসে অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে আপনার ভুল থাকা জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে নিতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ
১। চাকরীর পাশাপাশি কিভাবে পেসিভ ইনকাম করে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করবেন।
২। ফ্রিলেন্সিং এর কাজগুলো কি কি যা দ্বারা ঘরে বসে সহজে ইনকাম করা যায়।
খুব সুন্দর আর তথ্য নির্ভর পোষ্ট। আমারটাও সংশোধন করতে চাই।
আমার মেয়ের ব্লাড ক্যানসার চিকিৎসার জন্য জরুরী ভাবে ভারত নিয়ে যাব কিন্তু জন্ম নিবন্ধন ভুল হওয়ায় সংশোধনের আবেদন করলে সার্ভার আবেদন নিচ্ছে না।এখন আমি কিভাবে জন্ম নিবন্ধন সমাধান করতে পারি।জন্ম নিবন্ধন ছাড়া
পাসপোর্ট ও করতে পারছি না।
আপনি এভাবে অনলাইনে আপনার মেয়ের জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে না পারলে সরাসরি আপনার স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করে ঠিক করে নিন তাড়াতাড়ি।
জন্ম নিবন্ধন ভুল সংশোধন আর্টিকেলটি আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে। আশাকরি এটার দ্বারা অনেকেই উপকৃত হবেন।