চর্বি কমানোর উপায় খুঁজছেন ? ভাবছেন কোন তেল খেলে শরীর থেকে সমস্ত চর্বি গলে বেরিয়ে যাবে। শরীরে চর্বি জমা মানেই হল ওজন বেড়ে যাওয়া। আমাদের শরীরে চর্বি জমা নিয়ে কিন্তু আমাদের টেনশন এর কোন শেষ নেই। তাই কি ভাবে আমরা শরীর থেকে এই চর্বি সমূহ দূর করবো সেটা নিয়ে সবসময় চিন্তা করি।
কিন্তু আপনি জানেন কি ? আমাদের চারপাশে এমন কিছু ভালো বা উপকারী চর্বি আছে যেগুলো খেলে আপনার শরীরের ভেতরে জমে থাকা সমস্ত তেল চর্বি গলে বেরিয়ে যাবে ?
হে, এই চর্বিগুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী এবং লিভার ফ্রেন্ডলি। যেই চর্বিগুলোকে লিভারকে আলাদাভাবে প্রসেস করতে হয় না। সরাসরি লিভারে গিয়েই এগুলো আপনার শরীরে কাজে লেগে যেতে পারে।
তবে এই কোলেস্টরেল বা ফ্যাট থাকা কিন্তু আমাদের শরীরের জন্য অনেক ভালো। ভালো কোলেস্টোরেল প্রত্যেকের শরীরে থাকা প্রয়োজন। এটা দেহের মেটাবলিজম বা কর্ম ক্ষমতাকে বুষ্টিং করে। দেহের বিপাকক্রিয়া কে গতিশীল করে।
আমাদের দেহে জমে থাকা এই কোলেস্টোরেলটাকে সবচাইতে বেশি ক্ষতি করে Inflammation বা প্রদাহ। অর্থাৎ যে সমস্ত তেল শরীরের ভেতরে গিয়ে প্রদাহের সৃষ্টি করে।
যেমনঃ সয়াবিন তেল, সানফ্লাওয়ার অয়েল ইত্যাদি তেল যা প্রতিদিন আমরা রান্নায় ব্যবহার করে খাচ্ছি। এই তেলগুলি শরীরের জন্য ভাল না। এগুলো শরীরে কোলেস্টোরেল বা চর্বি জমতে সাহায্য করে।
তাই চর্বি কমানোর উপায় হিসাবে কিছু তেল বা চর্বি আছে যেগুলো খেলে আপনার ক্ষতি না হয়ে বরং উপকার হবে। আপনার কোলেস্টোরেল বা ফ্যাট কমাতে সাহায্য করবে। এই চর্বি কমানোর উপকারী তেলগুলো নিচে বিস্তারিত উল্লেখ করা হল।
১। MCT অয়েলঃ এই MCT অয়েল এটা কোকোনাট অয়েল থেকেই তৈরি করা এক প্রকার ঔষধি তেল। আপনি বাজারে খোঁজ করলে হয়তো পেয়ে যাবেন। এই তেল খেলে শরীরের বিপাক ক্রিয়া বা মেটাবলিজম অনেক বেড়ে যায়। ফলে শরীরের ফ্যাট বার্ন হতে সহায়তা করে।
অর্থাৎ আপনার শরীরের মেটাবলিক রেটটা কে বাড়াতে হবে। আর যদি মেটাবলিক রেট কম থাকে তাহলে আপনি কিছু না খেয়েই বা খালি পেটে থাকলেও মোটা থাকবেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেকে ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করেন। মোটা থেকে চিকন হতে চান।
কিন্তু না খেয়ে থাকার পরেও যখন তাদের ওজন কমে না। তখন বুঝতে হবে যে, তাদের বিএমআর বা মেটাবলিক রেট টা অনেক কম। তাই MCT অয়েল খেলে আপনার বিএমআর কে বুষ্টিং করবে বা ইনক্রিজ করবে।
MCT অয়েল এক থেকে দুই চামুচ করে প্রতিদিন কফির সাথে খেলেই যথেষ্ট। এটা শুধু মেটাবলিজমকে বুষ্টিং করে তাই না এটা আপনার ফ্যাট বার্ন করতে সহায়তা করবে।
২। এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েলঃ অর্গানিক এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল বা নারিকেল তেল শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্ট্ররেল কমিয়ে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে আনে এবং ওজন নিয়ন্ত্রন করে আপনার দেহের সঠিক ওজন বজায় রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া এই তেল স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির জন্যও ভালো। এই তেল আপনি কফির সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন অথবা তরকারিতে রান্নায়ও ব্যবহার করতে পারেন।
৩। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলঃ ফ্যাট বার্ন করার জন্য আরেকটি উপকারী তেল হল অর্গানিক এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল। এই অলিভ অয়েলের উপকারিতা অনেক। ইহা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক। এই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে ওমেগা ৩ এবং ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। তাই আপনি শাক সবজিগুলো এই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করে খেতে পারেন।
৪। মাছের তেলঃ ফিশ অয়েল বা মাছের তেল খেলে আপনার শরীর থেকে ফ্যাট হবে। ফিশ অয়েলকে Omega 3 Oil ও বলা হয়। এছাড়া ফিশ অয়েলে ভিটামিন এ ও ডি থাকে। ফিশ অয়েল স্ট্রোকের ঝুকি কমায়। তাই সবসময় এই ফিশ অয়েল খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
কারণ এই তেলে ওমেগা- ৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। এই তেল একটি ভালো সোর্স হিসেবে কাজে লাগে আপনার শরীর থেকে ফ্যাট বার্ন করতে। ফিশ অয়েল পাবেন যেমন- ইলিশ মাছ, পাঙ্গাস মাছ। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ যেমন- স্যামন, টুনা ইত্যাদি ও মাছের ডিম থেকে আপনি এই তেল পেতে পারেন।
৫। মাখনঃ অর্গানিক মাখন হলে ভাল হয়। মাখন স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের একটি সুন্দর উৎস। আপনার শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য এই স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরল খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই অর্গানিক ভাবে তৈরি মাখন বা বাটার সংগ্রহ করে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
প্রয়োজনে নিজেই ঘরে দুধ থেকে মাখন তৈরি করে নিতে পারেন। এই মাখন আপনি বাদামের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। যে কোনো বাদামের সাথেই আপনি খেতে পারেন। এছাড়া ডিম ও একটা ভালো চর্বির উৎস। একটা ডিম আপনি ঘি বা মাখন দিয়ে ভেজে খেতে পারেন।
উপরে বর্ণিত সবগুলো উপাদান আপনি চর্বি কমাতে অনায়াসেই খেতে পারেন। তবে এগুলোর পাশাপাশি আপনাকে অবশ্যই কার্বো হাইড্রেট বা শর্করার ভালো উৎস যেমনঃ শাক সবজি বেশী করে খেতে হবে। এগুলো চেষ্টা করবেন এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করে খাওয়ার জন্য।
চর্বি কমানোর উপায় হিসাবে এই তেলগুলি আপনি নিয়মিত খেলে আপনার শরীরের ক্ষতিকর চর্বিগুলো বার্ন হতে শুরু করবে। আপনার শরীরের যে ক্লান্তি বা ক্ষুধা মন্দা সেটাকে দূর করবে।
অর্থাৎ কিছুক্ষণ পরপর আপনার ক্ষুধা লাগার যে প্রবণতা সেটাকে দূর করে দিবে। ফলে অনেকক্ষণ আপনি না খেয়ে থাকতে পারবেন। আপনার ভিতরে কোন ক্লান্তি অনুভব হবে না।
পরিশেষে পরামর্শ হল বেশী করে শাক সবজি খান, রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যায়াম করুন এবং নিয়মিত পানি পান করুন।