গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা কেমন হওয়া উচিত ? What is the best food for pregnant women. প্রসূতি মা মানেই হল বিশেষ সতর্কতা আর বিশেষ যত্ন। যা একজন মাকে মানতে হবে প্রতিটা পদক্ষেপেই। বিশেষ করে নিয়ম করে খাওয়া দাওয়া তার মধ্যে অন্যতম।
একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য সঠিক পুষ্টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একজন গর্ভবতী সুস্থ মা’ই পারেন একটি সুস্থ সবল শিশু জন্ম দিতে। কারণ গর্ভাবস্থায় মায়ের দেহ থেকেই শিশু টি প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি গ্রহণ করে থাকে। তাই অনাগত সন্তান আর মায়ের ভবিষ্যৎ সুস্থতা নির্ভর করে গর্ভবতী মায়ের খাদ্যর উপর।
সাধারণত একজন গর্ভবতী মাকে স্বাভাবিক অবস্থার থেকে ৩০০ থেকে ৫০০ ক্যালোরির খাবার বেশি খেতে হয়। সেই সাথে ঠিক রাখতে হয় বিভিন্ন প্রকার পুষ্টিকর খাবার। যেমন- শর্করা, আমিষ, তেল চর্বি, শাকসবজি, ফলমূল এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার এর সঠিক অনুপাত।
এই গর্ভকালীন সময়ে পুষ্টির যেই ভুলগুলো সাধারণত সবচেয়ে বেশি হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম বা না বুঝে বেশি পুষ্টি গ্রহণ করতে থাকা। একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা হিসাবে যা কখনই কাম্য নয়। আবার অনেকেই আছেন যারা বুঝতেই পারেন না যে, গর্ভবতী অবস্থায় কোন খাবারগুলো বেশি জরুরি বা কোন খাবারগুলো না খেলেও তাদের চলবে। গর্ভপাতে কোন রকম সমস্যা হবে না। যেমন- কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার গ্রহণ।
একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা এর প্রথমেই রয়েছে ভাত। ভাত হল কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবারের উৎকৃষ্ট উৎস। একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য সঠিক নিয়মে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা গর্ভধারণের প্রথম স্তরে থাকার জন্য বমি বমি ভাব থাকার কারণে অনেক সময় কিছু খেতে পারেন না। তাই এই সময়টাতে বমি আসলে কষ্ট করে হলেও অল্প অল্প করে প্রয়োজনে কিছুক্ষণ পরপর এবং বারংবার খেতে হবে।
তবে এই সময়টায় কার্বোহাইড্রেট এর জন্য যাদের বমি আসার প্রবণতা থাকে তাদের জন্য পরামর্শ হলো রুটিকে টোস্ট করে বানিয়ে খেতে পারেন। তাহলে বমি ভাব থাকলেও খেতে কিছুটা ভাল লাগবে। তবে কোনো গর্ভবতী নারী যদি বমি হবার কারণে একেবারেই যদি ভাত বা কার্বোহাইড্রেট খেতে না পারেন তাহলে সেক্ষেত্রে সিদ্ধ করা আলু, বিস্কিট বা নুডুস বানিয়ে খেতে পারেন।
তাহলেও শরীরে কার্বোহাইড্রেট এর ঘাটতি কমে যাবে। এগুলো কার্বোহাইড্রেটের ভালো উৎস। তাছাড়া ভাত এবং রুটির জন্য তো আছেই। প্রতিদিন সকালের ভাত মাছের সাথে মসুর ডাল রাখুন। মসুর ডাল বাচ্চার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং জানা গেছে বাচ্চার জন্মকালীন ঝুঁকিও কমাতে সাহায্য করে।
এছাড়া প্রতিদিন সকালে কাজুবাদাম এবং দুটি বা তিনটি খেজুর খেতে পারেন। কারণ খেজুরে থাকা আয়রন গর্ভকালীন মায়ের রক্তস্বল্পতা রোধে সাহায্য করে। কাজুবাদাম রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে চিবিয়ে খেতে পারেন। বাদামে রয়েছে ভিটামিন ডি ও জিংক। যা বাচ্চার ভ্রূণ, মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র ও স্নায়ুবিক বিকাশে সাহায্য করে।
তবে গর্ভাবস্থায় যাদের ওজন অনেক বেশি পরিমাণে বেড়ে যায় তাদের জন্য পরামর্শ হলো অবশ্যই রাতে রুটি খেতে হবে। আর ভাত কিছুটা পরিমিত আকারে খেলেই আপনার কার্বোহাইড্রেট এর চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। তবে মনে রাখতে হবে গর্ভাবস্থায় সাধারণত দশ কেজি থেকে বার কেজি পর্যন্ত মেয়েদের ওজন বৃদ্ধি হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হয়।
তবে অনেকেই আছেন যারা এই সময়টায় বেশি বেশি খেয়ে তাদের ওজন অনেক বেশি বাড়িয়ে ফেলেন। যা পরবর্তীতে গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। তাই গর্ভাবস্থায় প্রত্যেক মায়ের ওজন যেন সঠিক উপায় বাড়ে সেই কারণে সঠিক পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সারাদিনের খাবারে অনেক বেশি কার্বোহাইড্রেট বা খুব মিষ্টি বা চিনি একজন গর্ভবতী মা না খেলেও কিন্তু চলবে। শুধুমাত্র পরিমিত আকারে কার্বোহাইড্রেট এর উৎস হিসেবে ভাত, রুটি, আলু, নুডুলস এবং বিস্কিট খাওয়া যেতে পারে। তবে রাতের খাবারে গর্ভবতী মায়েদের এসিডিটির সমস্যা হতে পারে। তাই রাতে ঘুমানোর দেড় থেকে দুই ঘণ্টা আগেই রাতের খাবার সেরে ফেলা ভাল।
একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নিউট্রিয়ান্স হচ্ছে প্রোটিন। যা গর্ভের বাচ্চার পরিপূর্ণ গ্রোথ এবং ডেভেলপমেন্টকে নিশ্চিত করে। তাই খাবারের সাথে মাকে অনেক বেশি প্রোটিন খেতে হবে। চাইলে একজন গর্ভবতী মা তার চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে পারেন। আর প্রোটিনের আদর্শ সোর্স হল মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম।
আরও পড়ুনঃ কি খেলে শিশুর ওজন বৃদ্ধি পাবে এবং শিশু দ্রুত লম্বা হবে।
এগুলো হল এনিমেল প্রোটিন এবং এগুলো আমাদের শরীরে সম্পূর্ণরূপে কাজে লাগে। তাই একজন গর্ভবতী মা সঠিক পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণকালে তার শরীরে আয়রন ও অন্যান্য ভিটামিনের চাহিদাগুলো পূরণ হতে সাহায্য করে থাকে। তাই একজন গর্ভবতী মাকে প্রত্যেকদিন দুই গ্লাস দুধ অবশ্যই খেতে হবে। যা তার বাচ্চার হাড়ের গঠন ও দাঁতের মজবুতের জন্য অনেক বেশি কাজে আসবে।
অতিরিক্ত ক্যালরি সমৃদ্ধ শর্করাযুক্ত খাবার গর্ভবতী মাকে এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন মিষ্টি জাতীয় খাবার, ফাস্টফুড, তেলের পিঠা। কারণ এগুলো একজন গর্ভবতী মায়ের ওজন ও রক্তচাপ বাড়ানোর পাশাপাশি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। চা বা কফি বা ক্যাফেইন যুক্ত খাবার আয়রন শোষণে বাধা দেয়। যার ফলে মা এবং শিশু উভয়ের পরবর্তীতে রক্তস্বল্পতা জনিত সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়।
শুধু তাই নয়, অনেক মায়েদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে বাচ্চা হওয়ার পর তাদের শরীরে বিভিন্ন স্থানে ব্যথা থাকে এবং শরীরের হাড়ের ক্ষয় হওয়া শুরু হয়। তাই যদি মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না থাকে তাহলে এক্ষেত্রে গর্ভের বাচ্চারও কিন্তু ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থেকে যায়। তাই একজন গর্ভবতী মাকে এই ক্যালসিয়ামের চাহিদা নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই দুধ বা দুগ্ধজাতীয় তৈরি খাবার প্রত্যেকদিন একজন গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
মাছ হল একজন গর্ভবতী মায়ের অত্যাবশ্যকীয় খাবার। একজন গর্ভবতী মা যদি প্রত্যেকদিন একটি বড় সাইজের মাছের টুকরা খায় তাহলে বাচ্চার আইকিউ থেকে শুরু করে বাচ্চার নার্ভ খুব সুষ্ঠভাবে গঠিত হয়। তাই বাচ্চার নিউরোলজিক্যাল ডেভেলপমেন্টের জন্য এবং বাচ্চার ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট এর জন্য একজন গর্ভবতী মাকে অবশ্যই প্রতিনিয়ত মাছ খেতে হবে।
এক্ষেত্রে মিঠা পানির দেশী মাছ বেশি করে খাবেন। সামুদ্রিক মাছও খেতে পারেন। সামুদ্রিক মাছে আছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড ও আয়ডিন। তবে সেটা পরিমানে কম খেতে পারলে ভাল। কারণ আমাদের দেশীয় মাছই হল প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস। আবার অতিরিক্ত লবনাক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। কারণ এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ বাড়ে। এর পাশাপাশি পায়ে পানি জমা বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুলে যেতে পারে।
তেল-চর্বি বা ফ্যাট একজন গর্ভবতী মাকে অবশ্যই খেতে হবে। যা হতে হবে সম্পূর্ণরুপে ন্যাচারাল ফ্যাট। কেননা বাচ্চার ব্রেইন ডেভেলপমেন্টের জন্য, বাচ্চার সঠিকভাবে পরিপূর্ণ বৃদ্ধির জন্য এবং বিশেষকরে মায়ের শরীরে ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে এই ভিটামিনগুলো শরীরে এবজর্বশনের জন্য ফ্যাট অনেক বেশি জরুরি। তাই মায়ের ন্যাচারালী ফ্যাটের সোর্স হিসেবে প্রত্যেক দিনের খাবারে উদ্ভিজ্জ তেল পরিমিত আকারে খেতে হবে।
শাকসবজিতে অবশ্যই তেলের উপস্থিতি থাকতে হবে। যেমন- ডিম সিদ্ধ করে না খেয়ে ডিমটা পোচ করে খেতে পারেন। কারন ডিম পোচ করে বানিয়ে খেতে হলে তেল লাগবে অর্থাৎ আপনার খাবারে পরিমিত তেলের ব্যবহারই কিন্তু আপনাকে ফ্যাটের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করবে। এছাড়া ন্যাচারাল ফ্যাট হিসাবে মাংস, ডিমের কুসুম, বাদাম ইত্যাদি হতে পারে একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য ফ্যাটের ভালো সোর্স।
শাকসবজি এবং ফলমূল একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক বেশি জরুরী। কেননা একজন গর্ভবতী মায়ের এই সময়টায় অনেক ধরনের শারীরিক, হরমোনাল মেটাবলিক সহ নানা রকম চেঞ্জ হয় শরীরে। তাই তাদের এই সমস্ত সমস্যা সমাধানে এই গর্ভাবস্থায় তাকে সুস্থ রাখতে ফলমূল এবং শাকসবজির কোন বিকল্প নেই।
তবে একটি পরামর্শ হলো একজন গর্ভবতী মাকে কোনভাবেই সিজনের বাইরের কোন ফলমূল খেতে দেয়া যাবে না। অর্থাৎ কেউ যদি শীতকালে গর্ভবতী হয় এবং তিনি যদি গ্রীষ্মকালীন কোন ফল খেতে চান তাহলে অবশ্যই তাকে কোন ফ্রজেন ফুড খেতে দেয়া যাবে না। কারণ অনেকে ফ্রোজেন এর মাধ্যমে সংরক্ষিত বিভিন্ন ফলমূল এক সিজনেরটা অন্য সিজনে খেয়ে থাকেন। কিন্ত একজন গর্ভবতী মাকে এটা খেতে দেয়া যাবে না।
বিশেষ করে দেশি ফল প্রতিদিন তার খাবারের তালিকায় রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে জাম, পেয়ারা, কলা, আমলকি বা লেবুও হতে পারে আপনার ফলমূলের ভাল একটি সোর্স। ভিটামিন-সি একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই জরুরী। তাই প্রতিদিনের খাবারে অবশ্যই ভিটামিন সি জাতীয় ফল বা ফলের তৈরি যে কোন খাবারই একজন গর্ভবতী মা খেতে পারেন। তবে কামরাঙ্গা, আনারস বা কাঁচা পেঁপে প্রথম ত্রৈমাসীকে খাওয়া যাবেনা। কারণ এগুলোতে কিছু এনজাইম থাকে যা প্রথম ত্রৈমাসীকে ভ্রুণের ক্ষতি করতে পারে।
একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা এর মধ্যে ফাইবার সম্রিদ্ধ খাবার থাকা খুবই জরুরী। তাই সবজি হতে পারে একজন মায়ের জন্য ফাইবারের ভালো উৎস বা সোর্স। কেননা অনেক প্রেগন্যান্ট মাকে দেখা যায় কনস্টিপেশনের সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে যে সমস্ত মায়েদের অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাচ্ছে তাদের জন্য কিন্তু সবজির ক্যালোরিটা ভালো একটা সোর্স হতে পারে। তাই সারাদিনের খাবারের সাথে সাথে অবশ্যই শাক সবজি রাখতে হবে। একজন মাকে মনে রাখতে হবে কাঁচা সবজি যখন তিনি সালাদ আকারে খাবেন তখন অবশ্যই সেগুলো ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে খেতে হবে।
মনে রাখতে হবে গর্ভাবস্থায় যে কোনো শারীরিক সমস্যা হলে কোন ডাক্তারই সহজে প্রেসক্রাইব করতে চান না। তাই এই গর্ভকালীন অবস্থায় যতটা সম্ভব বাইরের খাবার থেকে বিরত থাকবেন। এক্ষেত্রে তার হাজবেন্ড ও বাড়ির অন্যান্য সদস্যদেরও বিষয়গুলোর প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
কেননা বাইরের খাবার থেকে অনেক সময় জন্ডিস বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা একজন প্রেগনেন্ট মায়ের হতে পারে। তাই প্রেগনেন্সি পিরিয়ডকে আপনি উপভোগ করতে হলে ঘরে তৈরি করা খাবার খেয়েই উপভোগ করা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ঘরে তৈরি খাবারই হচ্ছে একজন গর্ভকালীন মায়ের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাবার।
আশাকরি বুঝতে পেরেছেন যে, একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা কেমন হওয়া উচিত।
একজন গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা ও করণীয় (1st Trimester Care):
একজন নারী গর্ভবতী হওয়ার পর প্রথম তিন মাস বা ১২ সপ্তাহ তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। একজন নারী মা হবার মাধ্যমেই তার নারীত্ব প্রকাশ পায়। কারন একজন নারীর অহংকারের একটি অংশই হলো তার প্রেগনেন্সি। একজন নারীর সারা জীবনের স্বপ্নই থাকে তিনি একসময় মা হবেন। তার আদর্শে সেই সন্তানকে মানুস করবেন। এটা তার সারা জীবনের সমস্ত চাওয়া-পাওয়ার আনন্দ-বেদনা সুখ-দুঃখের প্রথম আকাঙ্ক্ষা।
তাই একজন নারী মা হবার পরে প্রথম কাজটি হলো এটা তাকে স্বাভাবিক আনন্দের সাথে এনজয় করতে হবে এবং পজিটিভলি নিতে হবে যে হ্যাঁ আমি মা হতে চলেছি। এর পাশাপাশি তাকে কিছু শারীরিক সমস্যার কথাও চিন্তা করতে হবে। যেমন- মাথা ঘোরা, বমি হওয়া, কাজে মন না বসা, দুশ্চিন্তা বেড়ে যাওয়া, রাতে প্রপারলি ঘুম না হওয়া।
আবার অনেকে গর্ভধারণের প্রথম ভাগেই তলপেটে অল্প অল্প ব্যথা ফিল করেন। পেট ভারী ভারী ফিল করেন। তাই এসব নিয়ে ঘাবড়ানোর বা দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। কারণ প্রত্যেকটি মাকেই এই বিষয়গুলো ফেইস করতে হয়। একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য এগুলো একটি স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে ধরে নিয়ে পজিটিভলি নিতে হবে। আনন্দের সাথে শুরু করতে হবে সবকিছু।
আরও পড়ুনঃ সন্তান নেয়ার আগে স্বামী স্ত্রী কে কি কি প্রস্তুতি অবশ্যই নিতে হবে।
সবচেয়ে জরুরি যে বিষয়টা সেটা হল আপনি যখন বুঝতে পারবেন যে আপনি পজিটিভ বা প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছেন। তখন থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে অবশ্যই আপনাকে একজন প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পরামর্শ বা চেকআপের জন্য যেতে হবে। তারপর সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার অবধি তাঁর তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে বা শুধুমাত্র তাকেই দেখানো উচিত।
কারণ একজন গর্ভবতী মা যখন প্রথম কোন প্রসূতি ডাক্তারের কাছে যান তখন ডাক্তার সাধারনত সেই মাকে কিছু কাউন্সিলিং করে দেন বা বিধি নিষেধ দিয়ে দেন। যা সেই মাকে সন্তান হওয়া অবধি মেনে চলতে হবে। তাই বিশেষ কোন সমস্যা ব্যতীত শুধুমাত্র একজন ডাক্তারের কাছে থেকেই নিয়মিত তার তত্ত্বাবধান এর মধ্যে থাকাই শ্রেয়।
একজন গর্ভবতী মাকে কি করতে হবে, কি হবে না, কি খেতে হবে, কি টেস্ট করতে হবে, আপনি কখন ঘুমাবেন, আপনি কখন ভারী কাজ করতে পারবেন না, কাছে কিংবা দূরে কোথাও ট্রাভেল করলে কিভাবে করবেন ইত্যাদি সহ নানা বিষয়ের উপর সবগুলো গাইডলাইন প্রথম ভিজিটর সময়ই ডাক্তার একজন প্রসূতি মাকে দিয়ে দেন।
যেমন প্রথম তিন মাসের মধ্যে বিমানে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় বা বিমানে ভ্রমনে এভোয়েট করতে বলা হয়। যে সমস্ত রাস্তায় উঁচু-নিচু রয়েছে বা ভাঙ্গা রাস্তা রয়েছে সে সমস্ত রাস্তা অতিক্রমের সময় গাড়িতে না গিয়ে কষ্ট করে পায়ে হেঁটে পার হতে হবে।
একজন মায়ের আগের প্রেগনেন্সিতে যদি এবরশনের কোন হিস্ট্রি থেকে থাকে তাহলে দেখার বিষয় আছে যে এই প্রেগনেন্সিতে এসে প্রথমেই হরমোনাল কোন ট্রিটমেন্ট বা সাপোর্ট দিতে হবে কিনা।
আপনার আগের প্রেগনেন্সিতে আপনার হয়তো ডায়াবেটিস ছিল। তাই এই প্রেগনেন্সিতে এসে হয়তো ডাক্তার এটাও বুঝতে চাইবেন যে, এখন আপনার ডায়াবেটিস জাতীয় কোন সমস্যা আছে কিনা। অর্থাৎ কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট করা হয় প্রাথমিক অবস্থায়।