উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় ঘরোয়া ভাবে। অন্যান্য সাধারণ ঘরোয়া রোগ যেমন- জর, ঠাণ্ডা, সর্দি, ডায়াবেটিস ইত্যাদি অসুখের মত এখন উচ্চ রক্তচাপও ঘরোয়া একটি রোগ হিসাবে দেখা দিয়েছে। রক্তচাপ কমাতে যাওয়ার আগে প্রথমেই আমাদের জানা দরকার কিভাবে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হয়। কারণ এই উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে আপনি যত ভাল করে জানবেন ও বুঝবেন তাহলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা ততটাই আপনার জন্য সহজ হবে। তেমনি ঘরে বসে কিছু নিয়ম মেনে চলতে পারলে এই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় খুব সহজে।
আমরা সবাই জানি যে, আমাদের দেহের অভ্যন্তরে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় রক্তনালী, শিরা ও উপশিরা। এই নালীগুলো দিয়ে নিয়মিত সারা শরীরে অনবরত রক্ত সরবরাহ বা প্রবাহিত হতে থাকে। মানব দেহের এই রক্তনালীগুলো হল অনেকটা রাবারের মতো নরম, কোমল এবং পাতলা। এগুলো প্রয়োজনে প্রসারিত হতে পারে এবং প্রয়োজনে সংকুচিতও হতে পারে।
তবে কোন কারণে যদি এই রক্তনালীগুলো শক্ত হয়ে যায় তখন কিন্তু এগুলো প্রয়োজন মতো আর প্রসারিত ও সংকুচিত হতে পারে না। ফলে এই নালীগুলি দিয়ে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয় এবং রক্ত প্রবাহিত হবার জন্য ধীরে ধীরে রক্তনালীর দেয়ালে চাপ পড়তে থাকে। আর তখনই দেখা দেয় উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার। এটা ছাড়াও ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়ার জন্য আরো অনেক কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ ও কারণ রয়েছে সেগুলো আমরা পরবর্তীতে জানব।
আরও পড়ুনঃ উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও কারণগুলো কি কি ?
রক্তচাপ বেড়ে গেলে মানবদেহে কি কি সমস্যা সৃষ্টি হয়ঃ
ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ বেড়ে গেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে । প্রথমত রক্তনালীগুলো ক্রমেই দুর্বল হয়ে যেতে পারে । রক্তনালির দেয়াল দুর্বল ও পাতলা হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে সেটা ফুলে উঠতে থাকে । ফলশ্রুতিতে রক্তনালী ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । যার ফলে ব্রেইনে রক্তক্ষরণ দেখা দেয় । এই সমস্যাটা আপনার পেটে ভিতরের রক্তনালীতেও হতে পারে ।
এরপর আরেকটি যে সমস্যা হতে পারে সেটা হলো রক্তনালীতে চর্বি জমাট বাঁধা । একটি সুস্থ সবল স্বাভাবিক রক্তনালীর দেয়ালে কখনো চর্বি জমাট বাঁধতে পারে না । কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ রক্তনালীকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকে । ফলে রক্তনালীর দেয়ালে ধীরে ধীরে চর্বি ও কোলেস্টরেল জমতে থাকে । এভাবে ধীরে ধীরে রক্তনালির দেয়ালে চর্বি জমতে জমতে বড় হয়ে রক্তনালী অনেকটা সরু হয়ে যায় । অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে চর্বির গায়ে রক্তও জমাট বাঁধে । এভাবে একটা পর্যায়ে গিয়ে রক্তনালীর মুখ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
তখন রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হয় ও রক্ত সামনের দিকে আর এগোতে পারে না । আর তখনই ব্রেীন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক এর মত দুর্ঘটনা ঘটে যায় । যদি ব্রেইনের মধ্যের রক্তনালী এভাবে বন্ধ হয়ে যায় তখন হয় ব্রেইন স্ট্রোক । তখন ব্রেইনের এক পাশের অংশ স্বাভাবিক রক্ত পায় না । ফলে সেখানকার কোষগুলো অকেজো হয়ে মরে যায় । অনুরূপভাবে হার্টের স্বাভাবিক রক্তনালি বন্ধ হয়ে গেলে হয় হার্ট অ্যাটাক ।
এগুলো ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ দীর্ঘদিন ধরে থাকলে শরীরে আরো অনেক ধরনের ক্ষতি বা সমস্যা দেখা দিতে পারে । যেমন- চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া, কিডনি দুর্বল হয়ে অকেজ হয়ে যাওয়া, হার্ট দুর্বল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি । এই সমস্যা সমূহ ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপের সবচাইতে ভয়ংকর দিক হলো এক নীরবতা বা চুপ থাকা । কারণ শরীরে উচ্চ রক্তচাপ যখন হয়ে যাবে তখন স্বাভাবিক দৃষ্টিতে শরীরে কোন ব্যথা বা অসুবিধার কোন লক্ষণ পাওয়া যায় না । মানুষ স্বাভাবিকভাবে তাঁদের দৈনন্দিনের কাজকর্ম করতে পারে । কোন সমস্যা হয় না।
আরও পড়ুনঃ ব্লাড প্রেসার মাপার সঠিক নিয়ম।
ফলে অনেকে এটাকে গুরুত্ব দিতে চায় না, বরং অগ্রাহ্য করে থাকেন । আর এই অগ্রাহ্যের সুযোগেই উচ্চ রক্তচাপ ধীরে ধীরে শরীরের নানাবিধ ক্ষতিসাধন করতে আরম্ভ করে দেয় । আর হঠাৎ করে দেখা দেয় মারাত্মক সব সমস্যা বা ব্যাধি । এ কারণে উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বা সাইলেন্ট কিলারও বলা হয় । তাই উচ্চ রক্তচাপ হলে এটাকে কখনোই হালকাভাবে নেয়া যাবে না বরং সিরিয়াসলি নিতে হবে ও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে ।
উচ্চ রক্তচাপ হলে ঘরোয়া ভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়ঃ
উচ্চ রক্তচাপ যতই হোক না কেন আপনি চাইলে এটাকে ঘরোয়া ভাবে কমিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন । এজন্য চিকিৎসকেরা প্রথমেই পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে, আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন আনতে হবে । বিশেষ করে আপনার খাবার ও অভ্যাসের প্রতি বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে । এখানে প্রথমেই চলে আসে লবণ খাওয়ার কথা । যেটা ছাড়া আমাদের এক মুহূর্ত চলেই না।
তবে উচ্চ রক্তচাপ হবার পর আপনি দিনে কতটুকু লবণ খাচ্ছেন তার ওপর বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে । কারণ উচ্চ রক্তচাপ হয়ে গেলে কাঁচা লবণ খাওয়া আপনাকে অবশ্যই পরিহার করতে হবে । যদিও বা খেতেই হয় সেক্ষেত্রে (দৈনিক হিসেবে) এক চিমটি পরিমান বা পৌনে এক চা চামুচ এর চাইতেও একটু কম লবণ খেতে পারেন । তার মানে এই নয় যে আপনি লবণদানী হতে খাবার খাওয়ার সময় এক চিমটি পরিমানের লবন তুলে নিয়ে খেয়ে নিলেন । প্রকৃতপক্ষে বিষয়টা কিন্তু এরকম নয়।
খেয়াল করে দেখবেন যে, আমরা প্রতিদিন যতটুকু পরিমানে লবণ খাই তার বেশিরভাগই আমাদের খাবারের ভেতরেই কিন্তু লুকিয়ে থাকে । যেমন- যে কোন তরকারি রান্না করতে গেলে লবণ লাগে, যে কোন ভর্তা বানাতে লবণ লাগে । কারণ লবণ বিহীন কোন তরকারিই স্বাদ যুক্ত হয় না । আবার যে কোন টক জাতীয় ফল খেতে গেলে আমরা লবণ দিয়ে খাই । আবার আমরা বিভিন্ন নাস্তা যেমন- পূড়ী, সিংগারা, সালাত, বার্গার, পিয়াজু, সমুচাতেও লবন মিশিয়ে নিয়ে খাই । কারণ লবণ মিশিয়ে খেতে মজা লাগে । বলতে গেলে লবণ দেয়া নেই এমন খাবার আমরা কমই খাই।
ফলে এভাবে দিনে কি পরিমান লবন আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে খাবারের মাধ্যমে তার কোন সঠিক পরিমাণ আমরা জানি না । বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, মানুষ দৈনিক নিজের অজান্তেই প্রচুর পরিমাণে লবন খাচ্ছেন । আর উচ্চ রক্তচাপের রোগী হলে আপনার জন্য সেটা অনেক বেশি ঝুঁকি বহন করে । তাহলে কি আমরা লবণ খাব না ? হ্যাঁ, অবশ্যই খেতে পারবেন। তবে, সেটা নিয়ম জেনে ও মেনে তারপরে খেতে পারবেন এবং ধীরে ধীরে এভাবে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কমিয়ে আনতে হবে। যেমন- ভাত খাওয়ার সময় আলাদা করে কাঁচা লবণ খাওয়া পরিহার করতে হবে। এমনকি খাবার টেবিলেও লবণের পাত্র রাখা যাবে না। কারণ চোখের সামনে থাকলেই পূর্ব অভ্যাসবশত আপনার লবণ খেতে ইচ্ছা জাগবে। অনেকে আরেকজনের দেখাদেখিও লবণ খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকের মধ্যে একটা ধারণা কাজ করে যে, কাঁচা লবণ খাওয়া উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর বরং লবণ ভেজে তারপর খেলে কোন সমস্যা হবে না, তাই ভাজা লবন অনায়াসে খাওয়া যেতে পারে। আমাদের প্রচলিত এই ধারণাটি সম্পূর্ণরূপে ভুল। কারণ, লবণ কাঁচা হোক আর ভাজাই হোক তাতে সোডিয়াম উপাদানটি থাকে। আর সোডিয়াম উচ্চ রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। এই সোডিয়াম যাতে পেটে না যায় তাই তরকারিতেও লবণ কম দিয়ে রান্না করে খেতে হবে। রান্না করার সমস্ত উপাদান গুলিতে কতটুকুন পরিমানে লবণ আছে সেটা আপনাকে অনুমান করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ আপনার স্কিনকে কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন।
অনেক সময় রান্নার সময় খাবারের স্বাদ বাড়াতে আমরা সয়াসস, মেওনিজ, ইস্ট, বিট লবণ, টেস্টিং সল্ট মিশিয়ে থাকি। এগুলোতে কিন্তু প্রচুর পরিমাণে লবণ থাকে। তাই রান্না করার সময় এসবের বদলে ন্যাচারাল কিছু ব্যবহারের চেষ্টা করতে হবে। বাসায় রান্না করা খাবারে এবং কিছু প্রাকৃতিক খাবারেও লবনের উপস্থিতি কিন্তু একটু বেশি পরিমাণে থাকে। সেগুলো এড়িয়ে চলুন এবং খেলেও অল্প পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করুন। যেমন- চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ, সামুদ্রিক মাছ, পনির, যে কোন ভর্তা বা ভাজি, আচার ইত্যাদি।
বাজার থেকে কেনা খাবার, রাস্তার পাশে ফুটপাটে তৈরি করা খাবার, রেস্টুরেন্ট কিংবা হোটেলের তৈরি খাবারগুলো খেতে অনেক স্বাদ লাগলেও যতটা সম্ভব এগুলো এড়িয়ে চলতে অভ্যাস করুন। আপনার প্রশ্ন আসতে পারে কেন এড়িয়ে চলতে হবে ? আসল কারণ হল এগুলোতে কি পরিমাণে লবণ দেওয়া আছে সেটা আমাদের জানা নেই। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের কথা চিন্তা করে কম লবণ দিয়ে স্বাদের খাবার রান্না করার সম্ভাবনা সেসব জায়গায় থাকে না। তাই উত্তম পরামর্শ হলো যে এগুলো পরিহার করুন।
বোতলজাত টমেটো সস, টমেটো ক্যাচাপ এড়িয়ে চলবেন। কারণ এগুলোতে অনেক লবণ থাকে। নাস্তায় পুড়ি, সিঙ্গারা, চপ, কাবাব, চিপস, স্যান্ডউইচ, পপকর্ণ, নুডুলস, এগুলো উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা পরিহার করে চললে উপকৃত হবেন। বরং নাস্তায় একটি করে ফল খেতে পারেন। তবে, সেই ফল আবার লবণ বা বিট লবণ দিয়ে মাখিয়ে খাওয়া যাবে না। যারা প্রক্রিয়াজাত খাবার কিনেন যেমন- নুডুলস, পাস্তা, চিপস ইত্যাদি কেনার সময় প্যাকেটের গায়ে লবণের পরিমাণ দেখে কিনবেন। সেখানে লবণ কম দেয়া আছে এমন অপশন থাকলে সেটা দেখে কিনবেন।
কোন স্পেশাল অনুষ্ঠানে বা দাওয়াত খেতে গেলে বিরিয়ানি, কাচ্চি কিংবা পোলাও অথবা ফ্রাইড রাইস না খেয়ে সম্ভব হলে সাদা ভাত খাবেন। কারণ সাদা ভাত রান্নায় লবণের প্রয়োজন পড়ে না। হোটেলে ঢুকে নাস্তা করতে নান রুটি না খেয়ে বরং সাধারণ আটার রুটি খেতে পারেন লবণ পরিহার করার জন্য।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় হিসাবে খাবারের মধ্যে থেকে আর কোন খাবারগুলো কমাতে হবেঃ
উচ্চ রক্তচাপের রুগীদের জন্য চর্বি জাতীয় যে কোন খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। কারণ, তেল চর্বি বা ফ্যাট জাতীয় খাবার উচ্চ রক্তচাপ রুগীদের জন্য অনেক ক্ষতিকর। সব মিলিয়ে দিনে দুই থেকে তিন চা চামুচের বেশি তেল যাতে আপনার না খাওয়া হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেটা মাছ, মাংস, সবজি বা তরকারির সাথেই হোক বা নাস্তায় ভাজা পড়ার সাথেই হোক।
তাই খাবারের মধ্যে থেকে তেল চর্বি বা ফ্যাট কমানোর কিছু নিয়ম বা পদ্ধতি জানলে আপনি সহজে এসব খাওয়া কমাতে পারবেন। যেমন- রান্না করার সময় প্যানে তেল ঢালতে ছোট চা চামুচ ব্যবহার করুন। তাহলে তরকারিতে আপনি কতটুকুন পরিমানে তেল দিচ্ছেন সেটার হিসাব রাখা আপনার জন্য সহজ হবে। পরবর্তীতে তেল কম খেতে আপনার হিসাব করাটা সহজ হবে। যে কোন মাংসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে তেল ও চর্বি থাকে। তাই মাংস খেতে হলে চর্বি ছাড়া মাংস বেছে নিয়ে তারপর খাবেন।
আবার অনেকের কাছে হাঁস-মুরগির চামড়া খেতে মজা লাগলেও উচ্চ রক্তচাপের রুগীরা দয়াকরে এগুলো খাওয়া বন্ধ করুন। কারন হাঁস মুরগির চামড়ায়ও অনেক ফ্যাট থাকে। ঘি আর মাখন থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ এগুলোতে ফ্যাটের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। দুধের সর, ফুল ক্রিম বা ফুল ফ্যাট দুধ, কেক, পুডিং, পেস্ট্রি এবং মিষ্টি দই না খেয়ে বরং ফ্যাট ফ্রি দুধ আর টক দই খেতে পারেন।
ডিম তেল দিয়ে না ভেজে সেদ্ধ করে বা পোঁচ করে খাওয়ার চেষ্টা করুন। এখানে বলে রাখা ভাল উচ্চ রক্তচাপ হলে ডিমের কুসুম না খাওয়াই উত্তম। কারন দেখা যায় একটা ডিম ভাজতে অনেকে দুই থেকে তিন চা চামুচ তেল ব্যবহার করে ফেলেন। আবার যে কোন মিষ্টান্ন তৈরিতে আমরা প্রচুর পরিমানে চিনি ব্যাবহার করে থাকি। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য এই চিনি মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই চিনি খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে।
কোমল পানীয়, জুস এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে । তাই এগুলো একেবারেই খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে । কারণ সারা সপ্তাহে আপনি যতটুকু চিনি খেতে পারবেন 500ml এর এক বোতল কমল পানীয়তে এর চেয়েও বেশি পরিমাণে চিনি থাকে । সুতরাং বুঝতেই পারছেন চিনি আপনাকে কতটা কম খেতে হবে। টমেটো সস বা টমেটো ক্যাচাপে যেমন প্রচুর পরিমাণে লবণ থাকে তেমনি চিনিও থাকে প্রচুর পরিমাণে। তাই লবণের মতোই তেল ও চিনিও বিভিন্ন রান্নায় উপকরণ এবং খাবারের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই একটু সচেতনতা ও সতর্কতার সাথে রান্না করা এবং খাবার খাওয়া সম্পন্ন করতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় হিসাবে উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা কি কি খেতে পারবেনঃ
কিছু খাবার আছে যেগুলো বেশি করে খেলে রক্তচাপ কমে যায়। কিছু কিছু খাদ্যে পটাশিয়াম থাকে অনেক যেটা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই কোন কোন খাবারে পটাশিয়াম থাকে ও কিভাবে বেশি পটাশিয়াম খাবেন? বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে একজন বেক্তির দৈনিক ৪,৭০০ মিলিগ্রাম পরিমান পটাশিয়াম খাওয়া প্রয়োজন। পটাসিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস হল কলা।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় হিসাবে কলা ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে আলু, লাল আলু, পালং শাক, বেদানা, মিষ্টি কুমড়া, ডাবের পানি ইত্যাদি খাবার। এগুলো তুলনামূলক সহজলভ্য হওয়ায় উচ্চ রক্তচাপের রুগীরা অনায়াসে খেতে পারেন। তাই প্রতিদিন এসব ফল খাবেন। একসাথে না খেতে পারলে দিনের বিভিন্ন সময়ে ভাগ করে করে খেতে পারেন অথবা পূর্বের অভ্যাস না থাকলে দিনে দিনে ফল খাওয়ার সংখ্যা বাড়াতে পারেন।
প্রতিদিন আলাদা করে থালায় নিয়ে শুধুমাত্র রান্না করা সবজি খাবেন। ফল ও শাক-সবজিতে প্রাকৃতিকভাবেই প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। তাই ওষুধের পরিবর্তে এগুলো খাওয়ার অভ্যাস করুন। এগুলো আপনার উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করবে।
এছাড়া খাদ্যে পটাশিয়াম বাড়ানোর আরেকটি উপায় হল ফ্যাট ফ্রি দুধ ও টক দই। প্রতিদিন অন্তত এক পোয়া করে এগুলো খাওয়ার চেষ্টা করুন। এই খাবার গুলো বেশি করে খেতে বলার কারণ হলো আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাবার কমিয়ে উপকারী ও পুষ্টিকুণ সমৃদ্ধ খাবারগুলো বেশি করে খাবেন। আগে ভাত বেশি খেলে ভাতের পরিমাণ কমিয়ে সবজি বেশি করে খাবেন।
এছাড়া ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশী করে খাবেন। প্রতিদিন তাজা ফল যেমন- আপেল, কমলা, মাল্টা, জাম্বুরা, পেয়ারা, আমলকী, বেদানা, নাশপাতি, পেঁপে ইত্যাদি ফল খেতে হবে। তাহলেই দেখবেন আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।
উচ্চ রক্তচাপের রুগীদের জন্য কিছু পরামর্শ ও সতর্কতাঃ
এতক্ষণ উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় হিসাবে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সেই নিয়মগুলো অনুসরণ করে চলতে পারলে গবেষণায় দেখা গেছে ১০ থেকে ১১ পয়েন্ট পর্যন্ত রক্তচাপ কমতে পারে। যা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক বড় একটি সংখ্যা বলা যায়। এগুলো স্বাভাবিকভাবে অনুসরণের জন্য কেবল মাত্র রোগী একাই নয়, পরিবারের সকল সদস্যদের সাদরে অংশগ্রহণ প্রয়োজন। পরিবারের সবাইকেও এই বিষয়গুলো পরিস্কারভাবে জানতে হবে সকলের উচ্চ রক্তচাপ হতে বাঁচার জন্য।
এছাড়া আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় হিসাবে কোন ডাক্তার বা ডায়েটেশনের পরামর্শ পেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই সেই অনুযায়ী নিয়ম মেনে চলবেন। এখানে যে পরামর্শ গুলো আলোচনা করা হয়েছে তা শুধুমাত্র উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের জন্য দেয়া হয়েছে। তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি অন্য কোন রোগ থাকে যেমন- বিশেষ করে কিডনি রোগ থাকে। তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অথবা পুষ্টিবিদের পরামর্শ বা প্রেসক্রিপশন ফলো করবেন।
এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। তাই আপনার রক্তচাপের অবস্থা বুঝে ডাক্তার আপনাকে যেই ওষুধগুলো দিবে সেগুলো অবশ্যই অনুসরণ করবেন। যদি ঔষধ সেবন বন্ধ করতে হয় তাহলে নিজে নিজে বন্ধ না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বন্ধ করুন।
দেখা গেল আপনি প্রেসার মেপে দেখলেন যে আপনার হাই প্রেসার কমে একেবারেই নরমাল হয়ে গেছে। তাই নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, আর উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাবেন না। এটা কিন্তু কোনভাবেই করা যাবে না। কারণ উচ্চ রক্তচাপ আপনাকে কিছুই বুঝতে দিবে না ও সে নীরবে শরীরের ক্ষতি সাধন করতে থাকবে। তারপর হয়তো একদিন দেখা যাবে হার্ট এটাক বা স্ট্রোকের মত দুর্ঘটনা।
এছাড়া আপনার ওজন যদি বেশি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই সেই ওজনকে আপনার কমাতে হবে। ওজন যত কম থাকবে আপনার ব্লাড প্রেসার এর পরিমাণও তত কম থাকবে। তাই নিয়মিত শরীর চর্চা করুন। দৌড়াতে সমস্যা হলে প্রয়োজনে বেশী বেশী হাঁটুন। প্রতিদিন অন্তত আধাঘন্টা করে দ্রুত হাঁটুন।
আপনি যদি ধূমপান বা অ্যালকোহল সেবনে অভ্যস্ত হন তাহলে আজই চিরতরে এই বদ অভ্যাস ত্যাগ করুন । কারণ ধূমপান এবং উচ্চ রক্তচাপ দুটোই হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
আশা করি উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় হিসাবে এই নিয়মগুলো মেনে চলবেন। তাই নিয়ম মেনে সুস্থ থাকুন নিরাপদে থাকুন ।