আলুর ফেসিয়াল কিভাবে করবেন। How to do potato facial at home. বাড়িতে আলুর ফেসিয়াল (Potato Facial at Home) করা একেবারেই সহজ। ইচ্ছে করলে আপনি ঘরে বসে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই আলুর ফেসিয়ালটি করতে পারেন।
ত্বকে থেকে দাগ ময়লা দূর করে দ্রুত ফর্সা হতে চাইলে এই ফেসিয়ালটি একবার নিজে ট্রাই করে দেখতে পারেন। অনেকে বিউটি পার্লারে গিয়ে অনেক টাকা খরচ করে এই আলুর ফেসিয়াল টি করে থাকেন। এই ফেসিয়ালটি নিয়মিত কিছুদিন করলে আপনার মুখ থেকে বিভিন্ন ধরনের দাগ যেমন- ব্রণের দাগ, মেছতার দাগ, রোদে পোড়া কালো দাগ সহ সকল প্রকার দাগ দূর হয়ে যাবে।
কারণ আলুর রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ যা ত্বকের যে কোন সমস্যা দূর করতে পারে। আলুতে ভিটামিন- এ, বি (বি-৬) ও ভিটামিন- সি আছে। এছাড়াও আলুতে আছে প্রিচুর পরিমানে পটাশিয়াম, আয়রন, অ্যান্টি অক্সিডেণ্ট এবং ফাইবারসহ প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট। আরও আছে গ্লকোজ, অক্সিজেন, ভিটামিন- বি কমপ্লেক্স, এমিনো এসিড এবং ওমেগা-৩ সহ অন্যান্য ফ্যাটি এসিড। এই উপাদানগুলো ত্বকের বিভিন্ন ধরনের উপকার করে ত্বকের জৌলুস বাড়িয়ে তুলে।
তাই আলুকে ফেসিয়াল হিসাবে ত্বকে ব্যাবহার করলে দ্রুত ফর্সা হওয়া সম্ভব। চলুন তাহলে জেনে নেই How to do potato facial at home বা কিভাবে আপনি ঘরে বসে এই আলুর ফেসিয়াল টি করবেন।
আমরা এই ফেসিয়ালটিকে চার টি ভাগে আলাদা ভাগ করে নিয়ে যদি করি তাহলে সঠিক কার্যকারিতা পাওয়া যাবে। যেহেতু ফেসিয়ালের প্রত্যেকটি ধাপেই আমরা আলুর রস ব্যবহার করব। তাই সবার আগে ৪/৫ চামুচ আলুর রস তৈরি করে নিন।
এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, আপনি যখন আলুর ফেসিয়াল করা শুরু করবেন তার আগ মুহূর্তে এই রসটি বানিয়ে নেবেন। প্রথমে একটি বড় সাইজের আলুকে ছিলে খোসা ছাড়িয়ে গ্র্যান্ড করে বা পাটায় পিষে ও চিপে আলুর সমস্ত রস বের করে আলাদা একটি পাত্রে নিয়ে নিন। তারপর ছেঁকে নিয়ে ফেসিয়াল করা শুরু করুন।
০১। ক্লিনজিংঃ ক্লিনজার বানানোর জন্য সবার প্রথমে একটি পাত্রে দুই টেবিল চামুচ আলুর রস নিয়ে নিন। তারপর এর সাথে এড করুন এক টেবিল চামুচ লেবুর রস। তারপর ভাল করে মিশিয়ে নিন। এখন এই ক্লিনজার টি একটি তুলার সাহায্যে ভিজিয়ে নিয়ে আপনার মুখ, গলা ও ঘাড়ের ভিজিয়ে মেসেজ করুন কিছুক্ষণ। এভাবে ম্যাসেজ করার ফলে আপনার ত্বক থেকে সমস্ত ময়লা দূর হয়ে যাবে। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তারপর দ্বিতীয় পদ্ধতি এপ্লাই করুন।
০২। এক্সফলিয়েশন (Exfoliation): আলুর ফেসিয়াল এর এই ধাপে একটি বাটিতে দুই টেবিল চামুচ আলুর রসের সাথে দুই টেবিল চামুচ চালের গুঁড়া ও দুই টেবিল চামুচ কাঁচা দুধ। এখন সবগুলো উপাদান ভাল করে মিশিয়ে নিন। দেখবেন মিশ্রণটির মধ্যে একটি কৃমি ভাব চলে এসেছে। এখন এই ক্রিমটি আঙুলের সাহায্যে আপনার সারা মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে নিন। তারপর কিছুক্ষণ আলতো হাতে মেসেজ করুন। দশ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আরও পড়ুনঃ ত্বক সবসময় টকটকে ফর্সা ও প্রনবন্ত রাখতে কিভাবে টমেটোর ফেসিয়াল করতে হয়।
০৩। ফেসিয়াল ম্যাসেজ (Facial Massage): প্রথম দুটি আলুর ফেসিয়াল ঠিকঠাকমত করা হয়ে গেলে এখনকার এই উপাদানগুলি এপ্লাই করতে হবে। এজন্য প্রথমে একটি পাত্রে দুই টেবিল চামুচ অ্যালোভেরা জেল নিয়ে নিন। এখানে এলোভেরা জেল ন্যাচারালটা হলে বেশী ভালো হয়। এছাড়াও আপনি দোকান থেকে কিনে ভালো ব্র্যান্ডের যে কোন এলভেরা জেলই ব্যবহার করতে পারেন।
তারপর এর সাথে এ্যাড করুন এক টেবিল চামুচ আলুর রস এবং এক টেবিল চামুচ কাঁচা দুধ। এখন সবগুলো উপাদান ভালো করে মিক্স করে নিতে হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত মিশ্রণটিতে একটি ক্রিমি ভাব না আসে। তারপর এই মিশ্রণটি হাত দিয়ে আপনার মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে রাখুন। তবে ঘাড়ে লাগাতে সমস্যা হলে অন্য কারো সাহায্য নিয়ে লাগাতে পারেন।
এভাবে দশ মিনিট আপনার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। আর কিছুক্ষণ পর পর ম্যাসেজ করুন। ঠিক যেভাবে ফেসিয়াল ম্যাসেজ করা হয়। এভাবে ম্যাসেজ করার ফলে ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় ও ত্বকের নিচের কোলাজেনগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে। এই ফেসিয়ালটি এতটাই কার্যকরী যে, আপনার চেহারা থেকে বয়সের ছাপ ও চোখের নিচের কালো দাগ সহ বলিরেখাও দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত এই আলুর ফেসিয়াল টি কিছুদিন ব্যবহারে আপনার ত্বক আগের থেকে অনেক টানটান ও মসৃণ হতে শুরু করবে। সবশেষে মিশ্রণটি পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দ্বারা মুখ ধুয়ে পরিস্কার করে ফেলুন।
০৪। ফেইসপ্যাক (Face pack): আগের সবগুলো উপাদান ব্যবহার শেষ হলে চতুর্থ পর্যায়ে এসে একটি ফেইসপ্যাক ব্যবহার করতে হবে। এটা তৈরি করার জন্য একটি পাত্রে এক চামুচ আলুর রসের সাথে এক চামুচ মুলতানি মাটি নিন। রূপচর্চায় মুলতানি মাটি খুব কার্যকরী একটি উপাদান। তারপর অ্যাড করুন এক চামুচ চালের গুঁড়া। এখন এই তিনটি উপাদান একত্রে ভাল করে মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রণটি আপনার মুখে, গলায় ও ঘাড়ে ভালো করে লাগিয়ে নিন এবং পনের মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
আরও পড়ুনঃ ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও রূপচর্চায় মুলতানি মাটি কিভাবে ব্যাবহার করবেন।
ব্যাস এভাবেই শেষ হলো আলুর ফেসিয়াল। তাই আর দেরি না করে এই নিয়মগুলো ফলো করে আজ থেকেই করা শুরু করুন আলুর ফেসিয়াল। এই ফেসিয়ালটি আপনি সপ্তাহে মাত্র দুইবার ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে এক টানা এক মাস ব্যবহারেই আপনার ত্বক হয়ে উঠবে দাগ মুক্ত ফর্সা ও উজ্জ্বল সুন্দর।